শতবর্ষী দুধের হাট, দিনে বিক্রি ৬ হাজার লিটার

বাগেরহাটের খুলনা মোংলা মহাসড়কের পাশে চুলকাঠী বাজার এলাকায় প্রতিদিনই বসে দুধের হাট। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই হাটে খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মোংলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা দুধ কিনতে আসেন। ভোর থেকেই হাটটি জমজমাট থাকে দুধ বেচাকেনায়। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয় এই হাটে।

জানা যায়, স্থানীয় হাকিমপুর, রণবিজয়পুর, ভরসাপুর, চুলকাঠি, খানপুর, সোনাতুনিয়া গ্রামের দুই শতাধিক দুগ্ধ খামারি এই হাটে দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। খামারে উৎপাদিত এসব দুধ এখান থেকে চলে যায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। কেউ দুধ কিনছেন মিষ্টির দোকানের জন্য, কেউবা হোটেলের জন্য। আবার কেউ বাড়িতে খাওয়ার জন্যও কেনেন এখান থেকে। ভেজালমুক্ত ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন কিনতে।

সরেজমিনে চুলকাঠী সড়কের পাশে বসা দুধের হাটে দেখা যায়, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ ভ্যানে, কেউ আবার গাড়িতে নানা ধরনের পাত্রে দুধ নিয়ে আসছেন হাটে। পাইকারদের ছাড়াও স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায় খামারিদের দুধ।

তবে করোনাকালীন মিষ্টির দোকান, হোটেল, অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুধের দাম কম বলে দাবি করেছেন দুধ বিক্রেতারা।

স্থানীয় হরিপদ কুন্ডু (৬৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে এখানে দুধের হাট বসে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন দুধ কিনতে। আমিও আগে এই হাটে দুধ বিক্রি করতাম। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় দুধ নিয়ে আসতে পারি না। কিন্তু হাটের প্রতি মায়ার কারণে প্রতিদিন ঘুরতে আসি।

হাকিমপুর গ্রামের দুধ বিক্রেতা মো. ইয়াসিন মোল্লা বলেন, আমাদের নিজেদের গরু থেকে সংগৃহীত দুধ নিয়ে প্রতিদিন এখানে আসি। এই দুধ বিক্রির অর্থেই চলে আমাদের সংসার। স্বাভাবিক সময়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও করোনা ও লকডাউনের কারণে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

আলমগীর শেখ নামের করোরী গ্রামের দুধ বিক্রেতা বলেন, দুটি গাভি থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫ কেজি দুধ এই হাটে নিয়ে বিক্রি করি। বর্তমানে দাম কমের কারণে গরুর খাবার ও নিজেদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তারপরও এই দুধ বিক্রির ওপরে নির্ভরশীল আমার পরিবার।

খুলনার খালিশপুর থেকে থেকে দুধ কিনতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, খাঁটি দুধ পাওয়া যায় এই হাটে। তাই পাঁচ বছর ধরে এখান থেকে দুধ কিনি। রমজান মাস উপলক্ষে বেশি করে দুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। দামও একটু কম আছে। তবে মহাসড়কের পাশে হাটটি হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

চুলকাঠী বাজার কমিটির সভাপতি মুরারী কৃষ্ণ নন্দী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এই হাটে দুধ বিক্রি হয়। আমার ধারণা, এই দুধের হাটটি ১০০ বছরের। আমরা কোনো খাজনা নিই না। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয়। ক্রেতা-বিক্রেতারা এসে নিজেদের সুবিধামতো বেচাকেনা করেন। তবে করোনার প্রভাবে দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে রয়েছেন দুগ্ধ খামারিরা।

তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশ থেকে পার্শ্ববর্তী কোনো স্থানে হাটটি যদি স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই দুর্ঘটনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাব্বেরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুধের হাট ঝুঁকিমুক্ত করতে আমি সরেজমিনে বাজার কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলব। তারা যেখানে উপযুক্ত মনে করেন, নিয়ম অনুযায়ী সেখানে হাটটি স্থানান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তিনি।

এনএ