আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল

রংপুরে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক সাহিদুন্নবী জুয়েলকে (৫০) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আত্মগোপনে থাকা গোলাম মর্তূজা অনিককে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

গ্রেফতারকৃত গোলাম মর্তূজা অনিক (২৯) শ্রীরামপুর ইউপির ইসলামপুর গ্রাম রফিকুল ইসলামের ছেলে। রোববার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ওসি) ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে সকালে শ্রীরামপুর ইউপির ইসলামপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে মোট ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন ১২ জন। 

পাটগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক সাহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা মামলার ১৬ নম্বর আসামি অনিক দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকার পর তিনি বাড়িতে এলে খবর পায় পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আরও কয়েকজন আসামি আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করা হবে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন সাহিদুন্নবী জুয়েল। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন শরিফ পড়ে যায়।

এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।

পাশের গ্রামে গুজব ছড়িয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা পরিষদ ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ইট-পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মহন্তসহ ১০ জন পুলিশ আহত হন।

পরে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

জুয়েলের চাচাতো ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে হত্যাসহ পৃথক তিনটি মামলা করেছেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পায়নি। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন দুটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএম