নিমাই চন্দ্র সরকার

রাজশাহী নগরীর সিটিহাট এলাকা থেকে ড্রামবন্দি উদ্ধার হওয়া তরুণীর পরিচয় মিলেছে। এই হত্যাকাণ্ডে পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত আরো তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই তরুণী হলেন ননিকা রাণী রায় (২৩)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর গড়েয়ার নিপেন চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। রাজশাহী মেডিকেল নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে সদ্য অধ্যয়ন শেষ করেন তিনি। পাঠানপাড়া এলাকায় মেসে থাকতেন তিনি।

গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল হলেন নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩)। তিনি পাবনার আতাইকুলার মৃত হেমন্ত সরকারের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী জিআরপি থানায় কর্মকত। কনস্টেবল নম্বর ১৯৬। ১৫ এপ্রিল থেকে ছুটিতে ছিলেন তিনি।

রাজশাহী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দল রোববার (১৮ এপ্রিল) রাতে নাটোরের লালপুরে বোনজামাইয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে। হত্যকাণ্ডের পর সেখানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

এই ঘটনায় আরো তিনজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় পিবিআই। তারা হলেন কাশিয়াডাঙ্গার আদারীপাড়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়ার শ্রীরামপুরের নূরুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী (৩৪) ও বিলশিমলার সতীশ রায়ের ছেলে আবদুর রহমান (২৫)।

তাদের মধ্যে আবদুর রহমান মাইক্রেবাসচালক। তার মাইক্রোবাসে করে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ফেলে আসেন জড়িতরা। সেই মাইক্রোবাসটিও জব্দ করে পিবিআই।

পিবিআই বলছে, ৬ থেকে ৭ বছর ধরে ননিকা রাণী রায়ের সঙ্গে কনস্টেবল নিমাই চন্দ্রের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমিককে দীর্ঘ দিন ধরেই বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন ননিকা। কিন্তু বিবাহিত হওয়ায় ওই কনস্টেবল প্রেমিকাকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

গত ৬ এপ্রিল তেরখাদিয়ায় বাসা ভাড়া নেন নিমাই। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই বাসায় প্রেমিকাকে ডেকে নেন তিনি। সেখানেই তাকে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ড্রামের ভেতরে ভরে মাইক্রোবাসে করে সিটিহাট এলাকায় ফেলে আসেন।

ডোবা থেকে ড্রামবন্দি ওই তরুণীর লাশ করে পুলিশ

তবে তদন্তে এতদূর এগোতেই পারেনি নগরীর শাহমখদুম থানা পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হন তারা। পরে লাশ স্বজনদের নিকটে হস্তান্তর করা হয়। স্বজনদের কাছে কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সেগুলো নিয়েই তদন্ত এগোচ্ছে।

তবে এই ঘটনায় একজন পুলিশ কনস্টেবলের জড়িত থাকার তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে তিনিও পেয়েছেন। তাকে পিবিআই গ্রেফতার করেছে এমন তথ্যও পেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি পিবিআইয়ের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন এখনো আসেনি। পুলিশের তরফ থেকে ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা ও হত্যার আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, জানতে চাওয়া হয়েছে। 

এদিকে, জিআরপি কনস্টেবলকে গ্রেফতারের তথ্য রোববার দুপুরের দিকে নিশ্চিত করেন রাজশাহী জিআরপি থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ সহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দুপুরের দিকে পিবিআই থেকে ওই কনস্টেবলকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কী ঘটনায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারেই তারা।

এসআই শেখ সহিদুল ইসলাম বলেন, পরিবারের চিকিৎসায় সময় দেওয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) ছুটি নিয়েছেন ওই কনস্বেল। ছুটি শেষে ১৯ এপ্রিল তার কর্মস্থলে যোগদানের কথা।

এদিকে, কনস্টেবল গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হতে দুপুরের পর পিবিআই দফতরে গিয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে যাননি কেউই। তবে সন্ধ্যা নাগাদ পিবিআইয়ের ফেসবুক পেজে ঘটনার প্রকাশ করা হয়। 

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে সিটিহাট এলাকার বাইপাস মহাসড়কের পাশের ডোবা থেকে ড্রামবন্দি অজ্ঞাত পরিচয় এক লাশ উদ্ধার করে শাহমখদুম থানা পুলিশ। ওই দিনই ঘটনাস্থল থেকে আলামত নেয় সিআইডি ও পিবিআইয়ের ক্রাইমসিন ইউনিট।

এ নিয়ে থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামাদের। এরপর থেকেই অপরাধীদের ধরতে করতে ছায়া তদন্ত করছিল পিবিআই।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর