অসহায় মানুষের জন্য এক টাকায় মিলছে খাবার

নামমাত্র এক টাকায় দেওয়া হচ্ছে খাবার। রাজবাড়ীতে পথে পথে, খোলা আকাশের নিচে কিংবা রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে থাকা অসহায় মানুষের জন্য এক টাকায় খাবার মিলছে। এদের কেউ অভুক্ত থাকে সারারাত, কেউবা আরও বেশি। এক টাকায় এক প্যাকেট খাবার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন অসহায় মানুষ।

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে রাজবাড়ীতে আটকা পড়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শতাধিক দিনমজুর।

আটকা পড়া শ্রমজীবী মানুষ থাকা ও খাবার সংকটে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়ায় রাজবাড়ীতে ‘মানবিক সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত খন্দকার রবিউল ইসলামের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবিক রাজবাড়ী’।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) লকডাউনের ৩য় দিনেও প্রতিদিনের ন্যায় আটকে পড়া শ্রমিক ও পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে মানবিক রাজবাড়ী নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।

‘মানবসেবায় অঙ্গীকারবদ্ধ’ স্লোগান সামনে রেখে সাংবাদিক খন্দকার রবিউল ইসলামের উদ্যোগে গড়ে উঠে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক রাজবাড়ী। করোনার প্রভাবে থমকে গেছে পৃথিবী। এর মাঝেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মানুষ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক রাজবাড়ীর পক্ষ থেকে ছিন্নমূলদের দেওয়া হচ্ছে খাবার

রাজবাড়ী শহরে প্রতিদিন ট্রেনযোগে বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন খেটে খাওয়া মানুষ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন। এই লকডাউনের ফলে রাজবাড়ীতে আটকা পড়া দিনমজুর মানুষের খেয়ে-না-খেয়ে দিন কাটছে।

এই অসহায়দের কথা চিন্তা করে লকডাউনের ১ম দিন থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক রাজবাড়ী।

গত বছর লকডাউনে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্রিতে খাবার বিতরণ করে আসছিল সংগঠনটি। পরবর্তীতে তারাই ওই বছর ১ মে থেকে শুরু করে ‘এক টাকার খাবার’ প্রকল্প। যা চলতি বছরের লকডাউনেও অব্যাহত রয়েছে। এক টাকায় দিনমজুর, ছিন্নমূল মানুষ, রেল স্টেশনে থাকা পথশিশু ও পাগল পেট ভরে খেতে পারছে।

‘এক টাকার খাবার’ মানবিক রাজবাড়ীর ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘ক্ষুধার মাঝে বেড়ে ওঠা এক মানুষের হাত ধরে মানবিক রাজবাড়ীর এই প্রকল্পটি শুরু। প্রতিদিন ১০০ জনের রান্না হয়। এরপর রিকশায় চলে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়। এক টাকার বিনিময়ে যেকোনো ছিন্নমূল, দিনমজুর ও পথশিশু কিনে নিতে পারে এই খাবার।’

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক খন্দকার রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, ক্ষুধার্তকে এক বেলা খাওয়ানোর আনন্দ থেকে মানবিক রাজবাড়ীর যাত্রা শুরু। আর্থিক অসংগতি থাকা মানুষের জন্য এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আসলে প্রথম দিকে আমরা ফ্রিতে খাবার দিতাম, এতে অনেক মানুষ তাদের প্রতি একটু ভিন্ন চোখে তাকা তো, তারাও লজ্জাবোধ করত। পরে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ফ্রিতে খাবার না দিয়ে এক টাকা করে নেব। এতে করে মানুষকে আর লজ্জায় পড়তে হবে না।

রাজবাড়ী শহরের রেলস্টেশনে এক টাকার খাবার খাচ্ছেন এক ব্যক্তি

সাংবাদিক রবিউল বলেন, দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দিনমজুর রাজবাড়ীতে আটকা পড়ে। শ্রমজীবী শতাধিক মানুষ রাজবাড়ী শহরের রেলস্টেশন, রেলওয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, কলেজপাড়া আরএসকে স্কুল, ফুলতলা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করে।

এ সময় আটকা পড়া শ্রমিকদের থাকা ও খাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে আমার সংগঠন ‘মানবিক রাজবাড়ী’ তাদের পাশে দাঁড়ায়। আমরা প্রথমদিন থেকেই তাদের খাবার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।

আজহার উদ্দিন (৬৯) নামে দিনমজুর জানান, তিনি দিনাজপুর থেকে রাজবাড়ীতে এসেছেন কৃষিকাজে যোগ দিতে। লকডাউনে বাস, ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীতে আটকা পড়েন তিনি।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে কুতুবউদ্দিন (৬০) নামে এক ব্যক্তি এসেছেন। তিনি জানান, খাবারের তেমন কষ্ট হচ্ছে না। সাংবাদিক রবিউল খাবার ব্যবস্থা করছেন। এছাড়া, স্থানীয় হাজিবাড়ি ও সাবেক সিপিবি সভাপতি আবুল কালামসহ আরও অনেকেই খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন।

সাংবাদিক রবিউল বলেন, আমি খুবই চেষ্টা করে যাচ্ছি শ্রমজীবী মানুষের একটা থাকার ব্যবস্থা করার জন্য। এতগুলো মানুষ খোলা আকাশের নিচে কীভাবে ঘুমাবে বলেন?

মীর সামসুজ্জামান/এমএসআর