কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্রদের ইফতারসামগ্রী দিচ্ছে পুলিশ

জনগণকে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে বৈশাখের দাবদাহে, ধুলায়, ধোঁয়ায় গলদঘর্ম হয়ে পরিশ্রম করে চলেছে নওগাঁ জেলা পুলিশ।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নওগাঁ মুক্তির মোড়ে দেখা গেছে, মাগরিবের আজান দেওয়ার কিছু সময় আগে ইফতার সাজাচ্ছেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য, বাকিরা ডিউটিতে আছেন।

দ্রুত সময়ের মধ্যে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজুসহ অন্যান্য খাবার মেশানো শেষে পানির কয়েকটি বোতল পৌঁছে দেওয়া হয় যারা ডিউটি করছেন তাদের কাছে। আজান শুনে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইফতার করছে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।

রোজা রেখে সারাদিন ডিউটি করার পর পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ইফতার করার সৌভাগ্যটাও তাদের হয় না। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বা কাঠের বেঞ্চিতে বসে কোনোমতে ইফতার সেরেই ফিরে যেতে হয় ডিউটিতে। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে সামান্য প্রশংসা তো পায়ই না বরং সমালোচনা থেকে রক্ষা পেলেই যেন তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

সেই সব নিবেদিত প্রাণ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ডিউটি পোস্টে শহরের মুক্তির মোড়ে বসে ইফতার করেন নওগাঁ জেলার সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বিপিএম।

এর আগে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে নওগাঁ পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া বিপিএম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো ছিন্নমূল মানুষের হাতে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেন।

সে সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু সাইদ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. ফয়সাল।

ছিন্নমূল রহিমা বেওয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘দিন তামান ভিক্ষা করে বেড়াই। য্যাতে আসতে ঘাটাত দেখি, পুলিশরা ঘাটাত দাঁড়ে থ্যাকা ডিউটি দেয়, আল্লাহ্ ওরকে (তাদের) ভালো করবে।’

গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন পৃথিবী হতবিহ্বল, অনিশ্চিত যাত্রায় মৃত্যুভয়ে যখন শঙ্কিত আমরাও সবাই, সবাই যখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিরাপদে, তখন পুলিশ সুরক্ষাসামগ্রীর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেনি। মানুষের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে; পথে নেমেছে।

করোনায় মৃতের জানাজা-দাফন, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, জরুরি সেবাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা, কৃষিপণ্যের পরিবহনে সহায়তা ইত্যাদি নানা কাজের মাধ্যমে নিজ দায়িত্বের পরিধির অনেক বাইরে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, আর ঘরে বসে নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে মাঠে থেকেই আক্রান্ত হয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশের মোট ৯১ জন কর্মকর্তা ও সদস্য মারা গেছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি।

শামীনূর রহমান/এমএসআর