চরবাসীর বাহন ঘোড়ার গাড়ি
চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন চালক
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলগুলোতে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য একমাত্র বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি। একসময় রাজারাই ব্যবহার করত ঘোড়া। তবে কালের বিবর্তনে সেই রাজা-বাদশার ঘোড়া দিয়ে আজ গাড়ি তৈরি করে জীবন-জীবিকানির্বাহ করছেন অনেকে। ব্যবসায়ীরা জেলা শহর থেকে সব প্রকার মালামাল ক্রয় করে ঘোড়ার গাড়িযোগে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকাসহ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে।
ঘোড়ার গাড়ি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সাধারণত মাইক্রোবাসের পুরোনো চাকা দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করেন। প্রতিটি গাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে ১২-১৪ হাজার টাকা। আর ঘোড়া কিনতে লাগে আরও ২৫-৩০ হাজার টাকা। দিনে আয় হয় ৬০০-৭০০ টাকা। তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণসহ ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করে আসছেন তারা। যেখানে অন্য কোনো গাড়ি সাধারণত চলাচল করতে পারে না সেখানেই তারা মালামাল বহন করে থাকেন। তারা আরও জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ ঘোড়ার গাড়ি আছে।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত ঘোড়ার গাড়ি। কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে চরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রকার মালামাল ক্রয় করে ঘোড়ার গাড়িযোগে নিয়ে যান জেলার বিভিন্ন চরে। দূরত্ব হিসেবে মণপ্রতি বিভিন্ন মালামালের ভাড়া নেন। বালুপথ পাড়ি দিয়ে পরিবহন করছেন বিভিন্ন প্রকার মালামাল ও কৃষিপণ্য। এ গাড়ি অনায়াসেই বালির ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। আর হাট-বাজার করাসহ মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য এ গাড়িই হয়ে উঠেছে চরবাসীর একমাত্র বাহন।
ঘোড়ার গাড়িচালক আনোয়ার ও আফজাল বলেন, আমাদের চরে অন্য কোনো গাড়ি চলে না। আমরা ঘোড়ার গাড়িযোগে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করি। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারে ব্যয়বহন করে আসছি। গাড়ি চালালে প্রতিদিন ৬-৭শ টাকা আয় করা সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার বলেন, আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মালামাল পরিবহনের জন্য অন্যতম বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। যার কারণে ঘোড়ার গাড়ি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুকনো মৌসুমে তারা ভালোই আয় করছেন। বন্যার সময় তারা বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করতে পারে না, সেই সময় তারা একটু বিপদে পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, অনেকে দিনমজুরির কাজ না করে ঘোড়ার গাড়ি চালাচ্ছেন। তারা ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা যাত্রাপুরঘাট থেকে মালামাল নিয়ে যাত্রাপুরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। চরাঞ্চলের জন্য ভালো একটি বাহন ঘোড়ার গাড়ি বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শ্যামল ভৌমিক বলেন, ১৬ নদ-নদীবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলা। এ ৪ শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরে পরিবহন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এখানে পরিবহন ব্যবস্থা শুধু ঘোড়ার গাড়ি। এ গাড়িতে করেই চরের মানুষ হাট-বাজার করাসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করছেন। একদিকে যেমন চরের মানুষ ঘোড়ার গাড়ির উপর নির্ভর হচ্ছে অন্য দিকে এ গাড়ি চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
এমএসআর