সারাদেশের মতো সিলেটেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়েছে। সংক্রমণের হার বাড়লে সিলেটে মানুষের মধ্যে সচেতনতার ব্যাপারে উদাসীনতা বেড়েছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চলাচল করলেও নমুনা পরীক্ষায় অনীহা রয়েছে বেশিরভাগেরই।

গত সপ্তাহেও যেখানে সিলেটের চারটি ল্যাবের প্রতিটিতে তিনশ’র বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হতো, সেটি এখন কমে একশ-তে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান লকডাউনের কারণে মফস্বলের লোকজন নমুনা পরীক্ষা দিতে না আসায় ল্যাবে কম সংখ্যক নমুনা জমা পড়ছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করাতেও অনীহা কাজ করছে। এতে করোনার আরও বড় ধরনের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। হাসপাতালে রোগী ভর্তি আশংঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। রোগীর চাপ বাড়ায় আইসিইউ ও বেড সংকট দেখা দিয়েছে। আইসিইউর জন্য রোগী নিয়ে আসা স্বজনরা ছুটাছুটি করছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। একইসঙ্গে অক্সিজেন সংকটও রয়েছে।

সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত প্রমাণিত রোগী ছাড়া কাউকে ভর্তি করা হচ্ছে না। ফলে উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা অনেক রোগীই ফিরে যাচ্ছেন।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। প্রতিদিনই চার থেকে পাঁচজন রোগী উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকেই আবার হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর মারা যাচ্ছেন। 

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকা থেকে স্ত্রীকে  নিয়ে ওসমানী হাসপাতালে এসেছিলেন স্বামী বজলু মিয়া। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তবে হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টাখানেক পরই তিনি মারা যান। তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক আবাসিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ওই নারীর মতো আরও অনেকেই এভাবে হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অনেকের আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। আবার অনেকেই করোনাভাইরাসের  উপসর্গ নিয়ে বাইরে চলাচল করছেন।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বেশিরভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে চলাচল করলেও নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তাতে আরও বেশি ক্ষতি ডেকে আনছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং সিভিল সার্জনের সঙ্গে সমন্বয় করে পাড়া-মহল্লায় ঘরে ঘরে করোনা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

এদিকে করোনার নমুনা পরীক্ষার হার কমলেও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি আশংঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বাড়ছে মৃত্যুর হার। শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী ভর্তিও সংখ্যা বাড়ছে।

হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. চয়ন রায় বলেন, ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ৫১ জন করোনা পজিটিভ ও ৩১ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে এই সময়ে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৩৬ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১০৫ জন। এনিয়ে সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭০০ জন।

এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১২ হাজার ৫৩৫ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৬৮৬ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ২৫১ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ২২৮ জনের করোনা রোগী আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। আর গত এক বছরে সিলেট বিভাগে করোনায় মারা গেছেন ৩১৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৬৫০ জন। গতকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩০৩ জন।

সিলেটের স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, রোগীর চাপ সামাল দিতে আইসিইউ সুবিধা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরও ২০০ আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিভাগের চার জেলার সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২১টি। এর মধ্যে সিলেটের শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৬ ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে রয়েছে ৫টি। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই।

সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, সরকারিভাবে শুধু শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। আর কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। বিভাগে সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মিলিয়ে ৮৯১টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।

এমএসআর