চিকিৎসার অভাবে প্রাণ গেল ক্যানসার আক্রান্ত শিশু সাগরের
মায়ের কোলে শিশু সাগর
ভ্যানচালক বাবার ৫ বছর বয়সী ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত শিশু অর্থাভাবে চিকিৎসা ছাড়াই অবশেষে মারা গেল। মৃত শিশু সাগর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের নাদিরাবাদ-বাচ্চামারী গ্রামের ভ্যানচালক বাবলুর ছেলে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে নিজ বাড়িতে প্রাণ যায় শিশুটির। প্রায় দুই দশক ধরে ভ্যান চালিয়ে ৫ সদস্যের পরিবার চালান বাবলু। ৪ মাস আগে থেকে ৫ বছর ৪ মাস বয়সী ছেলে সাগর আলী ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
আক্রান্ত সাগর নাদিরাবাদ-বাচ্চামারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণিতে পড়তো। নিজের পরিবার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব ছিল। মৃত্যুর আগেই শিশু সাগর চিকিৎসার অভাবে হারিয়েছিল নিজের দুটি চোখ।
দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ব্যথায় কাতরাচ্ছিল সাগর। ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে শিশুটিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাতো প্রতিবেশীরা। তাদের দেওয়া বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েই চলছে অসহায় বাবা বাবলুর পরিবার।
শিশুর বাবা ভ্যানচালক বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আড়াই বছর আগে ছেলের শরীর ফুলতে শুরু করে। চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে ডাক্তাররা জানায়, কিডনির সমস্যা হয়েছে। পরে ওষুধ খেয়ে সেটি ঠিক হয়ে যায়।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘৩ মাস আগে হঠাৎ করে ডানদিকের চোখ ফুলে যায়। এর দুই দিনের মাথায় চোখ আরও ফুলে যায় ও নাক-কান দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। সেদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে ডাক্তাররা জানান, ছেলের ক্যানসার হয়েছে।’
বাবলু আরও বলেন, ‘ডাক্তারা বলেছিলেন, “ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাও, যা খেতে চায় তাই খেতে দাও। বাড়িতেই যাও, আল্লাহ যতদিন বাঁচিয়ে রাখে নিয়ে থাকো।” মন মানে না, তাই আবারও একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে টেস্ট করালাম। সেখান থেকে বলা হলো ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। চিকিৎসা করাতে মোটা অঙ্কের টাকা লাগতো। বাসায় এসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ঘুরেছি, আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু সহযোগিতা করেনি।’
সাগরের মা নাসিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘গত ৩ মাস থেকে ছেলে সারাদিন-সারারাত ব্যথায় কাঁদছিল। কোনোকিছুই খেতে পারছিল না। আমরা গরিব মানুষ, ঠিকমতো চুলায় হাড়ি উঠে না। ছেলে যে কয়েকদিন বাঁচল, তাও ভালো খাবার করে দিতে পারিনি।’
প্রতিবেশী লাকি বেগম, মোসফেরা বেগম ও হালিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের চোখের সামনেই সবকিছু হতে দেখেছি। সুস্থ একটি ছেলে এভাবে দীর্ঘ দিন ধরে মৃত্যুশয্যায় পড়ে ছিলো। প্রথমে একটু চোখ ফুলে গেছিলো, এ থেকে ধীরে ধীরে প্রতিদিন আকার আরও বেড়েছে।
তারা আরও বলেন, ছেলেটার কষ্ট দেখে সকলেই অঝোরে কেঁদেছে। এখন ক্যানসারে হলে তার চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু তারা তো ঠিকমতো খেতেই পায় না, তাহলে কীভাবে চিকিৎসা করাতো। সবাই সহযোগিতা করলে ছেলেটা জীবন ফিরে পেতো।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনেরর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম রাব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চক্ষু, ক্যানসার ও ইন্টারনাল মেডিসিন ৩ বিশেষজ্ঞ দলের সমন্বয় করে চিকিৎসা করলে ফলপ্রসূ রেজাল্ট পাওয়া যেতে পারতো। বাচ্চাটির চিকিৎসা সম্ভব ছিল, তবে এটি ব্যয়বহুল।
জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর