রেড কোরাল কুকরি

বিশ্বে ২৪তম ও বাংলাদেশে তৃতীয় বারের মতো দেখা গেল ‘রেড কোরাল কুকরি’ নামের এক বিরল প্রজাতির সাপ। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের টুনিরহাট প্রধানপাড়া এলাকার একটি বাদামক্ষেত থেকে সাপটি জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাতে সাপটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি জানিয়েছেন স্থানীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজলদিঘী ইউনিয়নের টুনিরহাট প্রধানপাড়া এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলীর বাড়ির পাশের বাদামক্ষেত থেকে সাপটি তার বাড়িতে ঢুকছিল। এ সময় হোসেন আলীর স্ত্রী লাইলী বেগম সাপটি দেখে চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। এরপর শাহেদুজ্জামান শাহেদ নামের গ্রামের এক যুবক সাপটি উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দেন।

জানা যায়, বিরল প্রজাতির সাপটি প্রথম ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে এবং প্রায় ৮২ বছর পর ২০১৯ সালে আবারও উত্তর প্রদেশে দেখা যায়। সর্বশেষ পঞ্চগড়ে দেখা মিলল। সাপটি নিশাচর প্রাণী। বেশির ভাগ সময় মাটির নিচেই অবস্থান করে। সাপটি মাটির নিচে কেঁচো ও লাভা পিঁপড়ার ডিম ও উইপোকার ডিম খেয়ে জীবন ধারণ করে। নরম মাটি পেলে মাটির ভেতরে চলে যায়। মাটির ভেতরে থাকার জন্য রোস ট্রালস স্কেল ব্যবহার করে এরা। স্কেল হলো সাপের মুখে সম্মুখভাগে অবস্থিত অঙ্গবিশেষ, যার সাহায্যে মাটি খনন করে। রেড কোরাল কুকরি পূর্ণ বিষধর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সাপটি নিয়ে গবেষণা চলছে। ভুটান, নেপাল ও ভারতের কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় সাপটি থাকতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা।

পৃথিবীর ২১তম সাপটি মৃত অবস্থায় ও ২২তম সাপটি আহত অবস্থায় পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার  ঝলইশালশিরীর ডাবর ভাঙা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয় ও ২৩তম সাপটি মৃত অবস্থায় চলতি বছরের ২৬ মার্চ সদর উপজেলার চাকলারহাট পশ্চিম ভাণ্ডারু গ্রাম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় এবং তৃতীয় ও পৃথিবীর ২৪তম সাপটি প্রধানপাড়া এলাকা থেকে জীবিত উদ্ধার হলো। 

সাপ উদ্ধারকারী যুবক শাহেদুজ্জামান শাহেদ বলেন, প্রতিবেশী হোসেন আলীর বাদামক্ষেত থেকে ঘরে ঢোকার সময় সাপটি উদ্ধার করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহকে জানালে তিনি বাড়ি থেকে সাপটি নিয়ে যান।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, সাপটি জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে সংরক্ষণ করেছি। সাপটি দিনের বেলায় সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। এজন্য বুধবার রাতে সাপটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।

ফিরোজ আল সাবাহ আরও বলেন, উজ্জ্বল কমলা ও লাল রঙের সাপটি অত্যন্ত মোহনীয়। লাল প্রবাল রঙের সাপটি মৃদু বিষধারী। এই সাপ পৃথিবীতে দুর্লভ। রেড কোরাল কুকরি হিমালয়ের পাদদেশের দক্ষিণে ৫৫ কিলোমিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায়। পৃথিবীর ২১তম সাপটি মৃত অবস্থায় ও ২২তম সাপটি আহত অবস্থায় পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার  ঝলইশালশিরীর ডাবর ভাঙা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ২৩তম সাপটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ২৪তম সাপটিকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়।

রনি মিয়াজী/এএম