৭১ বছরের জীবনে সুখের মুখ দেখলাম না। ৮ বছর বয়স থেকে পেটে-ভাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করেছি। অন্যের জমিতে করেছি কৃষিকাজ। আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও ভ্যান চালিয়ে সংসার টানতে হচ্ছে। কিন্তু অসুখের কারণে এখন আর ভ্যান টানতে পারি না। আফসোস, দুঃখ আমার পিছু ছাড়ল না।

এভাবেই জীবনভর কষ্টের কথা জানালেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামের আবেদ আলী সরদার। সারাটা জীবন দুঃখে-কষ্টে সংসার টেনে আনলেও ৭১ বছর বয়সে এসে এখন থাকার ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

আবেদ আলী সরদার বলেন, বিয়ের পর মাটির ঘরে বসবাস শুরু করি। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ফল বিক্রি, দিনমজুরি ও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালিয়েছি। অভাব কিন্তু লেগেই আছে। এজন্য ছেলেদের অন্যের বাড়িতে কাজে দিয়েছি। দুই-তিন বছর আগে হঠাৎ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হই। এরপর থেকে কোনো কাজ করতে পারি না। ভ্যানও টানতে পারি না। এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি।

তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত একটা ঘর বানাতে পারলাম না। ঝড়বৃষ্টির দিনে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। সরকারের কাছে একটা ঘরের আবেদন করছি; একটা ঘর পেলে জীবনের শেষ দিনগুলোতে একটু স্বস্তি পেতাম।

আবেদ আলী সরদারের পাশে স্ত্রী সবুরা খাতুন

আবেদ আলীর স্ত্রী সবুরা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী বৃদ্ধ মানুষ। কাজ করতে পারেন না। দুইটা ছেলে। একটা মাঠে কাজ করে, আরেকটা ভাঙারির ব্যবসা করে। আমাদের থাকার ঘর নেই। অনেক কষ্টে আছি।

প্রতিবেশী জহুরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলী দরিদ্র মানুষ। ঘর ছাড়া কিছুই নেই। ২০-২২ বছর ধরে দেখছি, মাটির ভাঙা ঘরে থাকেন। ঝড়বৃষ্টি এলে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তাদের থাকার একটা ঘর দরকার।

সাধুহাটী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলীর ভিটামাটি ছাড়া কোনো জায়গা নেই। হকারি ও দিনমজুরির কাজ করে সংসার চলে। তাদের থাকার একটা ঘর দরকার। আবেদ আলীকে একটা সরকারি ঘর দেওয়ার দাবি জানাই।

১ নম্বর সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কাজী নাজির উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলী হতদরিদ্র মানুষ। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তবে তিনি একেবারেই হতদরিদ্র। দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেও ভাগ্য বদলাতে পারেননি। আমার ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। সেখান থেকে তাকে যদি একটা ঘর দেওয়া যায়, তাহলে থাকার জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শাহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি তার জমি আছে, ঘরের অবস্থা ভালো না। সেক্ষেত্রে তিনি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ‘খ’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণির ঘরগুলোর বরাদ্দ এখনো আসেনি। বরাদ্দ এলে তাকে ঘর করে দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া তাকে ঘর দেওয়ার সুযোগ নেই।

ইউএনও এসএম শাহীন আরও বলেন, তিনি যদি ভূমিহীন হতেন তাহলে এখন ঘর দেওয়ার সুযোগ ছিল। এর বাইরে তিনি যদি সরকারি সুযোগ না পান তাহলে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

এএম/জেএস