এসআই সঞ্জয় সিকদার

নোয়াখালীতে পুলিশের হাতে আটক বড় ভাইকে থানায় দেখতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান (২২) নামের এক যুবক। তার অভিযোগ, বড় ভাইকে কেন আটক করা হয়েছে জানতে চাওয়ায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় সিকদার তাকে থানার একটি কক্ষে আটকে পিটিয়ে আহত করেছেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাৎক্ষণিক সঞ্জয় সিকদারকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে। এ ছাড়া গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনবাগ থানায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত আবদুল্লাহ আল নোমান সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের উত্তর কাদরা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটক ভাইয়ের খোঁজ নিতে যাওয়া যুবককে থানায় পেটানোর অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় সেনবাগ থানায় কর্মরত এসআই সঞ্জয় সিকদারকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করা হয়েছে। উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করে বলেন, আমি সেনবাগ বাজারে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনবাগ থানা পুলিশের এসআই সঞ্জয় সিকদারসহ একদল পুলিশ বিনা অপরাধে কাদরা মজুমদার বাড়ির পাশ থেকে আমার বড় ভাই শাহাদাত হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বিষয়টি শুনে আমি দুপুরে থানায় গিয়ে এক কনস্টেবলের কাছে জানতে চাই কেন আমার ভাইকে আটক করা হয়েছে। তখন পাশের কক্ষে থাকা এসআই সঞ্জয় ওই কনস্টেবলকে দিয়ে আমাকে ডেকে থানার একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে দরজা বন্ধ করে আমাকে আছাড় মেরে মেঝেতে ফেলে দেন সঞ্জয়। এরপর লাথি ও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বিনা অপরাধে কেন আমার ভাইকে আটক এবং আমাকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে আহত করা হলো, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে নোমানের সঙ্গে দেখাই হয়নি বলে দাবি করেছেন সেনবাগ থানা পুলিশের এসআই সঞ্জয় সিকদার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মজুমদার বাড়ির পাশ থেকে ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ শাহাদাত ও আবদুস সাত্তারকে আটক করেছি। এরপর নিয়ম অনুসারে তাদের থানায় আনা হয়েছে। শাহাদাতের ভাই নোমানের সঙ্গে আমার দেখা কিংবা কথাই হয়নি। আটকের সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল কি না তাও জানা নেই। মারধর ও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি মিথ্যা। মাদকসহ আটক ভাইকে বাঁচাতে এটি নোমানের কৌশল হতে পারে। আমি কোনো অপরাধ করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

তবে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাঈম উদ্দিন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকের এক পুলিশ সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। নোমানের বুকে ও পিঠে জখম রয়েছে, তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তাকে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালে রাখা হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে সেনবাগ থানা পুলিশের ওসি মো. নাজিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাঁজাসহ এক যুবককে আটকের পর তার ভাই থানায় এসে ঝামেলা করেছিল। তখন তাকে হাজতে ঢোকানোর কথা বললে দৌড় দেয়। এ সময় সিঁড়িতে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। তাকে কেউ মারধর করেনি।

থানায় মারধরের ঘটনা এবং ওসি-এসআইয়ের ভিন্ন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবকে নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ