ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করায় ভুক্তভোগী একটি পরিবারকে ২৫ দিন ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যকে অবগত করলেও তারা কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ওই ভুক্তভোগী পরিবারটি। এ ঘটনা ঘটেছে ঠাকরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের পাহাড়ভাঙ্গা উত্তর কুড়ালিপাড়া গ্রামে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বাদীর বাড়ির পশ্চিম পাশে যাতায়াতের রাস্তায় আসামিপক্ষের লোকজন বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। এতে বাদীর পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয় কয়েকটি পরিবাররে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে বিকল্প পথ হিসেবে তারা পাশের ক্ষেতের ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৬ জানুয়ারি বিকেলে গাছ থেকে পেঁয়ারা পেরে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীকে বাড়িতে ডেকে নেয় প্রতিবেশী এক কিশোর (১৭)। এরপর ঘরে নিয়ে গিয়ে ওই শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই কিশোর। পরে শিশুটি বাড়িতে ফিরে এসে কান্না কণ্ঠে পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানায়। এ ঘটনায় ১৮ জানুয়ারি ওই কিশোরকে আসামি করে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা।  পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতে ওই শিশু শিক্ষার্থী ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার বর্ণনাও করেছেন। 

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মামলার আসামি জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই তার পরিবারের লোকজন ভুক্তভোগী ওই পরিবারকে মামলাটি আপোসের জন্য চাপপ্রয়োগ করতে থাকে। ভুক্তভোগী ওই পরিবার আপোসে রাজি না হলে তাদের চলাচলের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে একঘরে করে রেখে দিয়েছে আসামিপক্ষের লোকজন। 

নির্যাতিত শিশুটির মা বলেন, আসামিপক্ষের লোকজন মামলা আপোসের জন্য চাপপ্রয়োগ করছে। আপোসে রাজি না হলে তারা আমাদের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে একঘর করে রেখেছে। আমি এর বিচার চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ শিরিন বলেন, ওদের দুই পরিবারের মধ্যে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নিয়ে বিরোধ চলছে। এখন আসামির লোকজন রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বাদীর পরিবারসহ আমাদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই রাস্তা খুলে দেওয়া হোক। 

মামলার বাদী বলেন, বিভিন্নভাবে আসামির লোকজন মামলাটি আপোসের জন্য চাপ দিচ্ছে ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে আমাদের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে আসামিপক্ষের লোকজন। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে জানালেও তারা কোনো ধরনের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। 

এদিকে মামলার আসামির মা হোসনে আরা বেগম ও চাচা মো. কাইয়ুম বলেন, আমাদের ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও মামলা করতে পারে। এজন্য তাদের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক বলেন, মামলার বাদী আমাকে জানিয়েছে তাদের যাতায়াতের রাস্তা আসামির লোকজন বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি। রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করতেছি। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য সুচরিতা দেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সেই জায়গায় গিয়েছিলাম এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে এই জায়গাটি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এলাকাবাসী রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে সরকারি মাটি ভরাট করা হয়েছে। এই মামলার প্রেক্ষিতে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবারটি এখন এক ঘরে হয়ে আছে। এখন পর্যন্ত যেহেতু রাস্তার তারা খুলে দেয় নাই আমরা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের বরাবর  স্মারকলিপি দেব। খুব তাড়াতাড়ি যেন সেই পরিবারের যাতায়াতের রাস্তাটি খুলে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ওসি ফিরোজ ওয়াহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আমরাও এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করতেছি।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে আমাকে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে পরবর্তীতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

আরিফ হাসান/এমএএস