পিরোজপুরে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, দুইজনের মৃত্যু
পিরোজপুরে ডায়রিয়া পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ননী গোপাল রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মৃতরা হলেন- উপজেলার দক্ষিণ ভাণ্ডারিয়া মহল্লার মো. ফজলুল হকের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫) এবং ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে জাহিদ হাসান (৯)।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। শনিবার বিকেল থেকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের অভাবে অনেকেই মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে অপেক্ষা করছেন। বর্তমানে জেলা হাসপাতালে ১৩৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত এক সপ্তাহে জেলা হাসপাতালে ৫১০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে রোগীর তুলনায় বেড সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা গেছে, ১৯৮২ সালে পিরোজপুর আধুনিক হাসপাতাল নামে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরুর পর পর্যায়ক্রমে ১০০ শয্যা এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালের পরিবর্তে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। সঙ্গে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় রূপান্তরের ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে জেলা হাসপাতালের কাজ নির্মাণাধীন থাকলেও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংকট রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নামমাত্র কিছু বেড দিয়েই চলছে জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কার্যক্রম। রোগীর সংখ্যা একটু বৃদ্ধি পেলেই দেখা দেয় বেড সংকট। ফলে বাধ্য হয়েই রোগীদের থাকতে হয় মেঝেতে। এছাড়াও পিরোজপুর জেলার সাতটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই ডায়রিয়া ওয়ার্ড। ফলে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে চাপ পড়ে জেলা হাসপাতালে।
চলতি বছর করোনা মহারারির কারণে জেলা হাসপতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ডসহ প্রায় সকল ওয়ার্ডেই রোগীদের চাপ রয়েছে। ফলে অনেকটাই অবহেলা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ডায়রিয়া রোগীরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গ্রীষ্মের তাপদাহ বেড়েই চলছে। এতে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। ফলে অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়াও বর্তমানে নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই পানি পানের ফলে জেলার অধিকাংশ লোক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। জেলা হাসপাতালে আগত প্রায় ২৫ শতাংশ রোগীই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এসব কারণেই হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে।
রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, ভোগান্তির আর এক নাম জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এখানে নেই পর্যাপ্ত বেডের ব্যবস্থা। রোগীই বেড পাচ্ছে না তারপর প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে রয়েছে স্বজনরা। ফলে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে পা রাখার জায়গা নেই।
অনেক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা মহামারির কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তেমন নজরদারি নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। চিকিৎসক সংকটও রয়েছে।
জেলা হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফ হাসান বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে অনেক বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। আমাদের যে পরিমাণ বেড রয়েছে তার চেয়ে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে বাধ্য হয়ে মেঝেতে বেড করে দিতে হয়েছে। তবে রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ননী গোপাল রায় জানান, মৃতরা উভয়ই ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও গৃহবধূ মমতাজ বেগমের নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। আর শিশু জাহিদ হাসান নিউমোনিয়া আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।
পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইফসুফ জাকী বলেন, বর্তমানে জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ রয়েছে। গত সপ্তাহ থেকেই ডায়রিয়া রোগীদের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমরা রোগীদের ঠিকমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ওষুদের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত খাবার সেলাইনসহ ওষুধ রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।
আবীর হাসান/আরএআর