করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গে রংপুর বিভাগে বেড়েছে মৃত্যু ও শনাক্তের হার। গেল এক সপ্তাহে এ বিভাগে করোনা আক্রান্ত  আরও ১৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নমুনা পরীক্ষায় ৪৪৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ মিলেছে।

এ নিয়ে রংপুর বিভাগে মোট করোনায় শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭ হাজার ৬৭২ জনে। এদের মধ্যে এই ভাইরাসে ৩৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মহামারি করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে বিভাগে গেল সাতদিনের মধ্যে শুধু একটি দিনই ছিল মৃত্যুহীন। বাকি ছয় দিনে প্রতিদিন লম্বা হয়েছে মৃত্যুর পরিসংখ্যান।

স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু দিনাজপুরে। এছাড়া সবচেয়ে কম আক্রান্ত পঞ্চগড়ে এবং মৃত্যু লালমনিরহাট জেলায়।

গত ১৭-২৩ এপ্রিল পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ ও দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে আট জেলা থেকে সংগ্রহ করা ২ হাজার ৬৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৪৪৪ জন করোনা পজিটিভ হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী জানান, গেল এক সপ্তাহে (১৭-২৩ এপ্রিল) বিভাগের আট জেলার মধ্যে দিনাজপুরে ৬ জন ও রংপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাটে ২ জন করে এবং নীলফামারী জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু দিনাজপুরে। এছাড়া সবচেয়ে কম আক্রান্ত পঞ্চগড়ে এবং মৃত্যু লালমনিরহাট জেলায়।

তিনি আরও জানান, লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্তের হার উদ্বেগজনক। গেল সাত দিনে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮৯ থেকে ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছিল। বর্তমানে রংপুর বিভাগে করোনা সংক্রমণের হার ২% থেকে ২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র বলছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের দুটি পিসিআর ল্যাবে বিভাগের ৮ জেলার ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন করে আরও ৫৯ জন করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

শনাক্তের মধ্যে দিনাজপুরে ২৪, রংপুরে ১৯, নীলফামারীতে ৬, গাইবান্ধায় ৫, কুড়িগ্রামে ২, ঠাকুরগাঁওয়ে ২ এবং লালমনিরহাট জেলায় ১ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

একই সময়ে দিনাজপুুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে সুস্থ্ হয়েছেন ১৬ জন।

স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, রংপুর বিভাগে গত বছরে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ হাজার ৬৭২ জনের পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৪১ জন। এখন পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ২৯২ জন সুস্থ হয়েছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী জানান, শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পর্যন্ত দিনাজপুুরে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ২৯২ জন ও ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রংপুরে ৪ হাজার ৫৮১ জন আক্রান্ত হওয়ার বিপরীতে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়। গাইবান্ধায় ১ হাজার ৬৮৩ জন আক্রান্ত ও ২১ জনের মৃত্যু, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ হাজার ৬২৩ জন আক্রান্ত ও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নীলফামারীতে ১ হাজার ৫১১ জন আক্রান্ত ও ৩৪ জনের মৃত্যু, কুড়িগ্রামে ১ হাজার ১২২ জন আক্রান্ত ও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া লালমনিরহাটে ১ হাজার ৩৬ জন আক্রান্ত ও ১৩ জনের মৃত্যু, পঞ্চগড় জেলায় ৮২৪ জন আক্রান্ত এবং ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্প্রতি সারাদেশের মধ্যে ৩১ জেলাকে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর ও নীলফামারী রয়েছে। যার মধ্যে ২৭ নম্বরে রংপুরের অবস্থান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর