কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের জিকে ক্যানালের একপাশে লাগানো গাছ কেটে নিয়ে গেছে কুষ্টিয়ার বন বিভাগ। ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে কখনো দিনে, কখনো রাতে কাটা হচ্ছে এসব গাছ। গাছগুলো স্ট্রিপ বাগান রক্ষণাবেক্ষণ সমিতির বনায়নের মাধ্যমে লাগানো। 

স্থানীয় প্রশাসন আর বন বিভাগের যোগসাজসে জিকে ক্যানালের পাশের ৩০ লাখ টাকার গাছ নামেমাত্র মূল্য দেখিয়ে অর্থ লোপাট হয়ে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার উজানগ্রাম ব্রিজ থেকে উজানগ্রাম রেগুলেটর সড়কের ১.৩৬ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির ওপর লাগানো ৫০০ গাছের অধিকাংশই নিজেদের ইচ্ছেমতো কেটে নিয়ে গেছে বন বিভাগ।

সর্বশেষ ১৬১টি বড় গাছের ভুয়া টেন্ডার তৈরি করে তা কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ৩০ লাখ টাকা দামের এসব গাছ মাত্র ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় টেন্ডার ধরে অর্থ লোপাটের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

৭ দিনে প্রায় ৫০টি গাছ কাটার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরে এলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়। নিয়ম বহির্ভূত এসব টেন্ডারের অভিযোগ বন বিভাগের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানায়, ক্যানেলের সড়কের পাশে থাকা প্রায় ১৬১টি বড়বড় মেহগিনি, কড়ই, শিশু গাছের প্রতিটির মূল্য ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে ১০ হাজার টাকা গড় মূল্য ধরলে গাছের দাম পড়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা। অথচ বনবিভাগের সঙ্গে যোগসাজসে ১৬১টি গাছের মোট দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার গড়ে। এতে প্রতিটি গাছের মূল্য গড়ে ১১৩৬ টাকা।

বন বিভাগের সঙ্গে স্ট্রিপ বাগান রক্ষণাবেক্ষণ সমিতির এবং উপকারভোগীদের নিয়ে একটি চুক্তিনামা করা হয়। সেই চুক্তিতে স্ট্রিপ বাগান রক্ষণাবেক্ষণ সমিতি ৫৫ ভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জায়গার মালিক ২০ ভাগ, বন বিভাগ ২০ ভাগ এবং ইউনিয়ন পরিষদ ৫ ভাগ। এই চুক্তি সামাজিক বনায়নের নিয়ম বহির্ভূত হলেও চুক্তিতে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড, সমিতির ও ইউনিয়ন পরিষদকে কোনো তথ্য না দিয়েই বন বিভাগ নিজের খেয়াল-খুশি মতো গাছ কাটেন।

২০০২ ও ২০০৩ সালে উজানগ্রাম ব্রিজ থেকে উজানগ্রাম রেগুলেটর পর্যন্ত ১.৩৬ কিলোমিটার জিকে ক্যানালের রাস্তার একপাশে সামাজিক বনায়নের আওতায় ৫০০ গাছ লাগানো হয়। ১৮/১৯ বছরে প্রতিটি গাছের মূল্য ১৫ থেকে ২৫ হাজার হলেও বনবিভাগ গড়ে দাম ধরেছে সাড়ে ১ হাজার ১৩৬ টাকা। এ মূল্যে হতবাক গাছ সংরক্ষণকারীরা। যাদের গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পাবার কথা। 

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, বন বিভাগ গাছ কেটে বিক্রি করেছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড জমির মালিক। আমাদের কোনো চিঠি বা মৌখিক কোনোভাবেই খবর দেয়নি। আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানার পর গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। 
 
এ বিষয়ে বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ, ভেড়ামারা-জগতী) আবদুল হামিদের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, টেন্ডার স্বচ্ছ হয়েছে। আমি আমার ভাইকে টেন্ডার দেয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে টেন্ডার দিয়েছে। 

এ বিষয়ে স্ট্রিপ বাগান রক্ষণাবেক্ষণ সমিতির সভাপতি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আমি কিছু জানি না। সবকিছুই জানে আমার ছেলে লালন। 

এ বিষয়ে লালনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি প্রত্যেকটা সদস্যের কাছ থেকে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়েছি। প্রত্যেক সদস্য জানে টেন্ডারের বিষয়। 

অভিযোগ আছে নানা প্রক্রিয়ায় গাছের কম মূল্য নির্ধারণ করে বন বিভাগের এক কর্মকর্তার ভাইকে অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

কুষ্টিয়া বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মো. শোয়াইব খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষ বন বিভাগের নাম শুনলেই কেমন করে ওঠে, কিন্তু আমরা যে ধরনের গাছ পেয়েছি সেই মূল্য ধরেছি। বাজারের দামের চেয়ে সরকারি মূল্য অনেক কম তাই কম ধরা হয়েছে।

রাজু আহমেদ/এমএএস