গানবাজনা বন্ধ থাকায় কষ্টে আছি
লোকসংগীতশিল্পী হাবুল মিয়া
‘ছোটবেলা থেকে একতারা, দোতারা, বেহালা ও খঞ্জুরি বাজিয়ে বিভিন্ন এলাকাসহ হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে আসছি। এতে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলেছে জীবন। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে গানবাজনা বন্ধ। গানবাজনা বন্ধ থাকায় কামাই-রোজগারও বন্ধ। এ অবস্থায় একেবারে বেকার হয়ে গেছি। বর্তমানে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’
কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দরিদ্র লোকসংগীতশিল্পী হাবুল মিয়া। হাবুল মিয়ার বর্তমান বয়স পঞ্চান্ন বছর। স্ত্রী, ২ ছেলে-মেয়ে নিয়ে চার সদস্যের সংসার তার।
বিজ্ঞাপন
পুরো সংসারই হাবুল মিয়ার উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু করোনার কারণে তিনি বেকার হয়ে পড়ায় তার সংসারে দুঃখ-কষ্ট প্রকট আকার ধারণ করেছে। খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে দিন কাটছে এই বাউলশিল্পীর পরিবারের সদস্যদের।
হাবুল মিয়া জানান, ১২ বছর বয়স থেকে পথে ঘাটে গান করেই জীবন চালিয়ে আসছি। গান করতে গিয়ে মদন ও কেন্দুয়াসহ দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকার হাটবাজার ও গ্রাম ঘুরে ঘুরে একতারা, দোতারা, বেহালা আর খঞ্জুরি বাজিয়ে গান গেয়ে বেড়িয়েছি।
তিনি বলেন, এতে যা রোজগার হতো তা দিয়েই দিনাতিপাত করা হতো। এক সময় যশখ্যাতি এলে কামাই-রোজগারও কিছু বেড়ে যায়। এতে বেশ ভালো চালাচ্ছিলাম সংসার। কিন্তু করোনার কারণে হঠাৎ বেকার হয়ে গেলাম।
বিজ্ঞাপন
বর্তমান দিনকাল কেমন চলছে জানতে চাইলে বাউল হাবুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ কণ্ঠে বলেন, গত বছর হতে গানবাজনা তেমন না থাকায় রোজগার বন্ধ হয়। খুব কষ্টে আছি। শুধু আমি না। আমার মতো অনেক শিল্পী, বাদক আজ বেকার হয়ে খুবই কষ্টে মানবেতর দিনযাপন করছেন। কোথাও গানবাজনা নাই। সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে? জানি না।
লোকসংগীতশিল্পী হাবুল মিয়া বলেন, জানি না আবার কবে গানের আসরে উঠতে পারব। আমরা শিল্পী মানুষ। কারো কাছে হাত পাততেও পারি না। শুধু আল্লার কাছে বলি, হে পাক রাব্বানা দেশ থেকে তুমি করোনা দূর করে দাও।
আমরা যেন আবারও সবাই মিলে একসঙ্গে চলতে পারি। আসরে উঠে যেন গাইতে পারি ‘মানুষ রতন করো তারে যতন/যারে তোমার মনে চায়ও রে/ ভবে মানুষ রতন।’ বলেন তিনি।
এদিকে সরকারিভাবে অসচ্ছল শিল্পীরা সহায়তা পেলেও প্রতিবন্ধী শিল্পী হাবুল মিয়া কোনোরকম সরকারি ভাতা পাননি।
স্থানীয় লোকসাহিত্য গবেষক রাখাল বিশ্বাস বলেন, নেত্রকোনাতে সহস্রাধিক লোকশিল্পী করোনার কারণে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এসব শিল্পীদের মধ্যে কেউ কেউ এককালীন সরকারি সহায়তা পেলেও অনেকেই তা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
নায়েকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রোমান জানান, বাউল হাবুল আমার পরিচিত। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালীন অসচ্ছল শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। যারা এ সহযোগিতা এখনো পাননি পর্যায়ক্রমে তাদেরকেও সহায়তা প্রদান করা হবে।
জিয়াউর রহমান/এমএসআর/জেএস