গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ী গ্রামের কৃষক হামিদ মিয়ার সংসার চলছিল ৩৫ শতাংশ জমিতে বছরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে। অতিমাত্রায় পরিশ্রম করেও উৎপাদন খরচের চেয়ে খুব বেশি একটা লাভবান হতে পারছিলেন না তিনি। এতে খুব হতাশায় জীবন কাটত হামিদ মিয়ার।

গত বছর প্রতিবেশী একজনের কাছে বেবী তরমুজের গল্প শুনেন তিনি। এরপর তিনি সেটির চাষ প্রক্রিয়া ইউটিউবে দেখেন এবং নিজেও চাষ করার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেন। পরে চুয়াডাঙ্গা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বীজ এনে ১০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বেবী তরমুজ চাষ করেন এবং সফলও হন তিনি। 

তাকে বেবী তরমুজ চাষ করতে দেখে ছুটে আসেন বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা। তারা হামিদের কাছে এর চাষ পদ্ধতি ও লাভের কথা শুনে নিজেরাও বেবী তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

অপরদিকে, জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় দরদরিয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আগাম জাতের এ তরমুজ চাষ করেন কৃষক আকবর হোসেন।

তিনি বলেন, তিনি প্রথমবার এই তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। প্রথম বছরেই তার আয় হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। সামনের বছর দ্বিগুণ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। তারমতে, নদীর তীরবর্তী এলাকায় পতিত থাকা জমিতে তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। 

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, গাজীপুরের মাটি অত্যন্ত ঊর্ব্বর। এখানে সব ধরনের ফসলের ভালো উৎপাদন হয়। গত কয়েক বছর ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কৃষকরা তরমুজের আবাদ করে আসছে। জেলায় শুধুমাত্র কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলায় তরমুজের আবাদ হয়। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর জেলার এ দুটি উপজেলায় ১.৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন প্রায় অর্ধশত কৃষক। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ মেট্রিকটন। 

চাষকৃত বেবী তরমুজের মধ্যে রয়েছে সুইট ব্ল্যাক বা কালো জাত, নতুন গোল্ডেন ক্রাউন বা হলুদ জাতের তরমুজ ও রক মেলন। এসব জাতের তরমুজ সারা বছর ধরেই আবাদ করা যায়। আকারে ছোট হওয়ায় স্থানীয়রা একে বেবী তরমুজ বলেই অভিহিত করে। প্রতিটি তরমুজের ওজন হয় ২-৩ কেজি। 

গত রোববার বেলা ১১টায় হামিদ মিয়ার তরমুজ বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মাটি থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু লম্বা মাদা (বেড) তৈরি করে মালচিং পেপার দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দেয়া হয়েছে। চার হাত অন্তর অন্তর একটি বেড বিছানো রয়েছে। এভাবে প্রায় ৩৫ শতাংশ জমিতে তৈরি করা হয়েছে ৩০টি বেড। এর ওপরে ছাউনির মতো ঘুরিয়ে মাচা দেওয়া হয়েছে। সেই মাচায় ঝুলে রয়েছে শত শত বাদামী ও সবুজ রঙের বেবী তরমুজ। এসব তরমুজ বেশ রসাল ও সুমিষ্ট। কচি থাকাবস্থায় তরকারি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। 

হামিদ মিয়া জানান, ইউটিউবে বেবী জাতের তরমুজ চাষ দেখে অনেকটা শখে চাষ শুরু করেন তিনি। এই তরমুজ চাষে শারীরিক পরিশ্রম হয় শুধু মাচা তৈরি করতে। এছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। এটি একটি লাভজনক ফসল। চাষিদের আগ্রহ ও ভালো লাভের আশায় এবার বেশ বড় পরিসরে তিনি বেবী তরমুজের চাষ করেছেন। কয়েকদিন পরই তরমুজগুলো বিক্রির উপযোগী হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, গত বছর বেবী তরমুজ বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বেবী তরমুজ বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাজীপুরের দুটি উপজেলায় এখন পর্যন্ত তরমুজের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে নানা ধরনের কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত এই ফল স্থানীয়ভাবে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। লাভজনক বিবেচনায় অনেক কৃষকের মধ্যে প্রতিনিয়ত আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমাদের আশা কৃষি অর্থনীতিতে এর একটি ছোঁয়া লাগবে।

শিহাব খান/এমএএস