শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেলেন শিক্ষক
সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে পরীক্ষার্থীদের রেখে কৌশলে পালিয়ে যান প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা
সরকারি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছে সিরাজগঞ্জের শহীদ মডেল স্কুল (বেলকুচি শাখা)। তবে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে পরীক্ষার্থীদের রেখে কৌশলে পালিয়ে যান প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা।
নির্দেশনা অমান্য করে বারবার ফোন দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করায় বিরক্ত অভিভাবকরা। তবে সন্তানের পড়াশোনার কথা চিন্তা করে চুপ আছেন বেশিরভাগ বাবা-মা।
বিজ্ঞাপন
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি শহীদ মডেল স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি কক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন শিক্ষকরা। তাদের মুখে নেই মাস্ক। সকাল ১০টা থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাংবাদিকদের দেখে শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে রেখেই পালিয়ে যান।
এক শিক্ষার্থী জানায়, আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম। আম্মুকে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি। স্যার ফোন দিয়ে বলেছেন, পরীক্ষা দিতেই হবে। পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ফি নিয়েছেন তা আম্মু জানে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জিল্লুর রহমান তার ছেলেকে পরীক্ষা দিতে এনেছেন জানিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন আগে প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন দিয়ে পরীক্ষার কথা জানান শিক্ষকরা। সকাল সাড়ে ৮টায় আবারও ফোন দিয়ে বলা হয়, পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে; আপনি এখনো কেন ছেলেকে নিয়ে আসেননি? দ্রুত আসেন। পাশেই আমার বাড়ি হওয়ায় বাধ্য হয়ে ছেলেকে নিয়ে আসি। পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি তাদের।
শহীদ মডেল স্কুল বেলকুচি শাখার পরিচালক মো. আব্দুল মজিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস ভবনের ভাড়া বাকি। শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না। ঈদের আগে তাদের কিছু দেওয়া উচিত। তাই পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আসলে এভাবে পরীক্ষা নেওয়াটা ঠিক হয়নি। আসলে এখন কতজন শিক্ষার্থী আছে তা দেখার জন্যই পরীক্ষার আয়োজন। এই শাখাটি সিরাজগঞ্জ শাখা থেকে পরিচালিত হয়।
সিরাজগঞ্জ শহীদ মডেল স্কুলের পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান তালুকদার রঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই শাখার পরিচালক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা। কেউ যদি নির্দেশনা অমান্য করেন তাকেই দায় নিতে হবে। পরিচালক আব্দুল মজিদকে এর দায় নিতে হবে।
বেলকুচি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম গোলাম রেজা সরওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। তারা আমাদের আওতাভুক্ত নয়। তবু যেহেতু নিষেধাজ্ঞা আছে ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছে; বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু স্কুল-কলেজে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার; সেহেতু পরীক্ষা নেওয়া অন্যায়। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শুভ কুমার ঘোষ/এএম