কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ ছিল নিত্যসঙ্গী। সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হতো বর্ষা মৌসুমে। তবে সড়ক পাকা হওয়ার খবরে মানুষের মনে বইছিল আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ নিমেষেই পরিণত হলো ক্ষোভে। কেননা, সড়ক নির্মাণে বালুর বদলে ব্যবহার করা হয়েছে কাদামাটি। এতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

তবে প্রকল্প তদারক কর্মকর্তা বলছেন, বিকল্প হিসেবে পুকুর থেকে ড্রেজিং করা বালু ফেলা হচ্ছে। সেগুলোও ভালো। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায়।

জানা গেছে, উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ধুরুয়া বাজার, তেরশিরা বাজার, নিমতলী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জের ভাতরী বাজার এলাকায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল মানুষ। প্রায় ৪ হাজার ২৫০ মিটার সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু হয় মার্চে। প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণকাজ পায় মেসার্স সাইল ব্রিকস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।

গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে সড়কটি বক্স কাটা ও বালু ভরাট করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে সড়কটির তেরশিরা অংশে বালুর পরিবর্তে ড্রেজার দিয়ে পুকুর থেকে তোলা কাদামাটি ব্যবহার শুরু করায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। আবার সড়কটিতে টানানো হয়নি প্রকল্পের তথ্যসংবলিত কোনো সাইনবোর্ড।

বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) এলাকার লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসন্তোষের কথা জানিয়ে লাইভ ভিডিও প্রকাশ করে। পরে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী ও কার্যসহকারী। তখন পুকুর থেকে ড্রেজিং করা কাদামাটি ‘ভালো বালু’ বললে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়েন তারা। এক ফুট করে বালু থাকার পরিবর্তে কোদাল দিয়ে খুঁড়ে কাদামাটি নাকি বালু, তা প্রকৌশল দফতরের প্রতিনিধিদের দেখানোর চেষ্টা করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, রাস্তার অনেকাংশ বালু ফেলা হলেও তাদের এলাকার অংশে কাদামাটি ফেলা হচ্ছে। এই অনিয়ম করে রাস্তা পাকা করা হলে রাস্তা দ্রুত ফেটে যাবে। অল্পদিনেই নষ্ট হবে রাস্তা।

রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটি টাকার সরকারি সড়ক যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই করবে, এটি তো মেনে নেওয়া যায় না। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সড়কটি যেন সঠিকভাবে করা হয়, কর্তৃপক্ষের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদার মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব না হলেও কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আতিয়ার রহমান বলেন, ঠিকাদার শম্ভুগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করে ভালো বালু ফেলছিল। কিন্তু এলাকার কিছু লোক রাস্তা দিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় বিকল্প হিসেবে পুকুর থেকে ড্রেজিং করা বালু ফেলা হচ্ছে। সেগুলোও ভালো। প্রল্পের তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ডও দ্রুত স্থাপন করা হবে।

গৌরীপুর উপজেলা প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. ওয়াহেদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বালু পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি খারাপ হয়, তাহলে সরিয়ে ফেলা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাসান মারুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। কাদামাটি সরিয়ে ফেলে যথাযথভাবে নির্মাণকাজ করতে এলজিইডিকে বলা হয়েছে। তবে সঠিকভাবে কাজ না করা হলে পরবর্তীতে বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে জানানো হবে।

উবায়দুল হক/এনএ