সঞ্জয় কুমার ও সুবর্ণা রানী

ভালোবাসায় স্বাক্ষর দিয়ে পৃথিবীতে একসঙ্গে দুজনের মৃত্যুর খবর রয়েছে। তেমনি একটি দৃঢ় মজবুত ভালোবাসার বন্ধন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সত্যিকারের ভালোবাসা যে এখনো রয়েছে তারই প্রমাণ দিয়েছেন নববধূ সুবর্ণা রানী।

স্বামী সঞ্জয় কুমারের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় নিজের কিডনি দিয়েছেন তিনি। স্বামী তার দেবতা, আর দেবতাকে নিয়ে আজীবন কাটাতে চান বলেই কিডনি দিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, বগুড়ার ধুনটের মথুরাপুর ইউনিয়নের চরজোলাগাঁতী গ্রামের অজিত হাওয়ালদারের ছেলে সঞ্জয় কুমারের (২৬) সঙ্গে প্রতিবেশী গজেন হাওয়ালদারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সুবর্ণা রানীর (১৯) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
 
পরে পারিবারিক সম্মতিতে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের ২ মাস পরই ভালোবাসার সংসারে বিভীষিকা নেমে আসে। ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল সঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সঞ্জয়ের শারীরিক পরীক্ষার পর জানতে পারেন তার দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। তাই দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে।

এদিকে, কিডনি কিনে তা প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন লাখ লাখ টাকা। যা কখনই সঞ্জয়ের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে হতাশায় পড়েন সঞ্জয় কুমার।

এ অবস্থায় সঞ্জয়ের মা ইতি রানী ছেলেকে একটি কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! চিকিৎসক ইতি রানীর শারীরিক পরীক্ষা করে দেখেন তারও একটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। তাই মায়ের পক্ষে ছেলেকে কিডনি দান করা সম্ভব না। 

এমতাবস্থায় সুর্বণা রানী তার স্বমাীকে কিডনি দেবেন বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন এবং সঞ্জয়ের সঙ্গে তার স্ত্রী সুবর্ণা রানীর কিডনি মিলে যায়। তাই স্ত্রী চাইলে তার দুটি কিডনির মধ্যে একটি তার স্বামীকে দিতে পারবেন।

এরপর দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর ১১ মার্চ ঢাকা শ্যামলী সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে দুজনেরই একসঙ্গে অপারেশন করা হয়। অপারেশন করে স্বামীর অকেজো দুইটি কিডনি ফেলে দিয়ে স্ত্রীর দেওয়া একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

বুধবার দুপুরে পরিবার সূত্রে জানা গেছে,  অপারেশনের পর আপাতত দুজনে হাসপাতালের কাছেই একটি ঘর ভাড়া করে রয়েছেন। বর্তমানে সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের নিবিড় পর্যবেক্ষণে স্বামী-স্ত্রী দুজনই সুস্থ আছেন।

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এমএসআর