পঙ্গু মিজানুরের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও
নাটোরের গুরুদাসপুরে এক পা ও এক হাত না থাকা পঙ্গু মিজানুর রহমানের (৫০) পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেন। তাকে দুই মাসের খাদ্যসামগ্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি ঘর প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ‘এক হাত এক পায়ে ৫ সদস্যের ভার’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্ট.কমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেনের। এরপর শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে তিনি উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী এলাকায় বসবাস করা পঙ্গু মিজানুর রহমানের ঝুপড়ি ঘরে দুই মাসের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হন। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর তাকে দেওয়া যায় কিনা তা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলেও জানান। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশানর (ভূমি) মো. আবু রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংবাদটি দেখার পরপরই আমি তার ঠিকানা সংগ্রহ করি। পঙ্গু মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। তারপরও ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাকে একটি ঘর বিষয়টি দেখবো।
মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, তার এক হাত এক পা না থাকলেও পরিশ্রম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিন ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। অভাব অনটনে দিন কাটে। এই দুঃসময়ে তাকে সহযোগিতা করার জন্য ইউএনওর প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, ১৭ বছর বয়সে একটি বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বাম হাত ও বাম পা কাটা পড়ে মিজানুর রহমানের। এতে তরুণ বয়সেই পঙ্গু হন তিনি। অভাবি বাবা ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি। কিছুদিন পর তারা বাবাও মারা যান। এ অবস্থায় তাকে হাল ধরতে হয় সংসারের। তারপর থেকেই শুরু হয় জীবনযুদ্ধ।
মিজানুরের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াদুল ইসলাম (১১) তাকে কাজে সহযোগিতা করে। মেজ ছেলে রাজিকুল ইসলাম (৭) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ও ছোট ছেলে রাজিবের বয়স ১ বছর এবং ৪ বছরের মেয়ে আজমিরা প্রতিবন্ধী।
অন্যের জমির কৃষিপণ্য ঘোড়ার গাড়িতে বহন করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান মিজানুর। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন কাজ থাকে না। শেষ সম্বল বলতে তিনটি ঘোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই তার।
এক সময় তিনি ভাঙ্গুরা উপজেলায় ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। এখন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী গ্রামে ঘোড়ার গাড়িতে ধান বহন করেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর করে বসবাস করেন মিজানুর রহমান।
তাপস কুমার/আরএআর