আলাবক্স তাহের টিটুর দল

মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার সেবক হিসেবে যার পরিচিতি এখন নোয়াখালীজুড়ে।

করোনা সংক্রমণের পর গত বছর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের মরদেহ দাফন বা সৎকার নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল। ভয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা অনেকেই করোনায় মৃতদের মরদেহ দাফনে এগিয়ে আসেননি। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরদেহ দাফন বা সৎকারে এগিয়ে আসেন কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু। সহযোগীদের নিয়ে গঠন করেন ‘মানবিক টিম’।

আলাবক্স তাহের টিটু ও তার টিম করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী দাফন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ইতোমধ্যে উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৩ জনকে তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছেন তারা।

মরদেহ দাফন ছাড়াও করোনায় আক্রান্ত ৮০ জন রোগীকে ওষুধসহ খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন তিনি। সমাজের বিত্তবানদের এসব মানুষের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান আলাবক্স তাহের টিটু।

টিমের সদস্য উত্তর সুন্দলপুরের ইমাম মোহাম্মদ দেলোয়ার বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে এমন অনেক মহামারি রোগ দিয়েছেন। এটা একটা পরীক্ষা। আমি মরদেহ ধোয়া থেকে শুরু করে জানাজা ও দাফন সব কাজে জড়িত আছি। মানুষের জন্য কিছু করতে আমার ভাল লাগে। শুরুর দিক থেকে এখন পর্যন্ত যেখানে করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর শুনেছি, আমরা টিটু ভাইসহ সেখানে চলে গিয়েছি। কেউ যেন অবহেলা না করেন তাই আমরা এ কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত সুস্থ আছি।

মানবিক টিমের আরেক সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি একজন মুসলিম। আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে মুসলমানের রীতিনীতি অনুযায়ী সবাইকে এমন মানবিক কাজে এগিয়ে আসা উচিত। করোনায় মৃত্যু হলে কেউ যেন দূরে ঠেলে না দেয়। টিটু ভাই যেভাবে সকল উৎকণ্ঠা ফেলে করোনা রোগীর মরদেহ দাফন করেন এভাবে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

মানবিক টিমের আরেক সদস্য এবি এম রিয়াজ হোসেন বাদশা বলেন, আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আমরা যদি অন্যের বিপদে এগিয়ে আসি তাহলে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। টিটু ভাইয়ের সঙ্গে এমন মহৎ কাজে থাকতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে। সমাজের ভেদাভেদ ভুলে দল মত নির্বিশেষে সকলের উচিত এমন মানবিক কাজে যুক্ত হওয়া।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিডি শাখার সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান সম্রাট বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস সারাবিশ্বে যে মহামারি আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমার বড় ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে মারা গেলে আলাবক্স তাহের টিটু ভাই ও তার মানবিক টিম এসে লাশের গোসল, জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেন। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যেভাবে কাজ করছেন তা সত্যিই অনেক প্রশংসনীয়। গত বছরেও টিটু ভাই করোনায় আক্রান্ত রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

আলাবক্স তাহের টিটু বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীর মরদেহ দাফনকে নফল ইবাদত মনে করি। আমি কবিরহাটের সাবেক মেয়র এবং জেলা পরিষদের সদস্য ছিলাম। আমি রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে মানবিকতার জায়গা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এই উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ১২ জনকে নিয়ে মানবিক টিম গঠন করেছি। আমাদের টিমে জানাজা পড়ানোর জন্য ইমাম সাহেব রয়েছেন। আমাদের মধ্যে সবাই নিরাপত্তা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আক্রান্তের এবং মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। আজ যদি আমার মা মারা যান, কেউ দাফন না করলেও আমাকে করতে হবে। সে তাড়না থেকে আমি নিজ উদ্যোগে এই দাফনের কাজ শুরু করেছি। আমি অর্থহীন একজন মানুষ। এই এলাকার মানুষের কাছে আমার অনেক ঋণ আছে। আমি তাদের জন্য কিছু করার আগ্রহ থেকে দাফনের কাজ করছি। আমি মনে করি, যাদের অর্থ নেই তাদের উচিত শ্রম ও সময় দিয়ে করোনা আক্রান্ত অথবা মহামারিতে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।

সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্ববান জানিয়ে টিটু বলেন, আপনাদের যাদের অর্থ আছে তারা চাইলে করোনায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারেন। আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। সবাইকে মরতে হবে কিন্তু বেশি বেশি দান করলে আপনি দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হবেন।

হাসিব আল আমিন/এসপি