রং মালার বয়স ১০০ ছুঁইছুঁই। চলেন লাঠিতে ভর করে। বয়সের ভাড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। ৩০ বছর আগে স্বামী সোনা মিয়া মারা গেছেন। তখন থেকেই ভিক্ষা করে চলছে তার সংসার। এক মেয়ে ও ২ ছেলে তার। সবার বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ভালো নেই রং মালা।

১৫ বছর আগে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল গ্রামে তার স্বামীর বসত বাড়ি পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর থেকে অভাবটা আকড়ে ধরেছে রংমালাকে। এখন সংসারের ব্যয়ভারের পাশাপাশি যোগ হয়েছে ভিটে-বাড়ির ভাড়াও। 

উপজেলার হাসাইল মাছ ঘাটের পাশেই এক টুকরো জমিতে বাৎসরিক ভাড়ায় ২ ছেলে, ছেলেদের বউ আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে থাকেন তিনি। তবে অধিকাংশ সময় ওই এলাকায় মেয়ের বাড়িতেই থাকা হয় তার।

রং মালা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখনই বাড়িতে থাকা হয় তার। এছাড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। ভিক্ষা করতে গিয়ে অন্যের বাড়িতেই খাবার খেয়ে নেন তিনি।

গাড়িতে করে বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানা এলাকায় রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে ভিক্ষা করছিলেন রং মালা। এ সময় টঙ্গিবাড়ী থানার ভেতরে ভিক্ষা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ ১৫ কেজির ত্রাণের ব্যাগ ধরিয়ে দেন তার হাতে। পরে এক নারীর সহয়তায় থানার গেট পর্যন্ত ত্রাণের ব্যাগ নিয়ে এলেও আর এগোতে পারছিলেন না তিনি। 

শরীরের ভার বইতে যেখানে হাতে নিতে হয়েছে লাঠি সেখানে ১৫ কেজির ভার বহন করা তারপক্ষে অসম্ভব। তাই ত্রাণ নিয়ে থানার গেটেই বসে পড়েন তিনি।

তার দুরবস্থা দেখে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদক এগিয়ে গেলে ওই বৃদ্ধা জানান, দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। আজ বাড়ি থেকে ৫০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে ভিক্ষা করতে এ এলাকায় এসেছেন। কিছু সময় ওই এলাকায় ভিক্ষা করার পর তার ত্রাণের ব্যাগটি দেখিয়ে বলেন, থানার স্যারেরা এই খাবারগুলো দিয়েছে তাকে। বলেই প্রশান্তির হাসি দিয়ে দু-হাত তুলে থানা পুলিশের জন্য দোয়া করতে থাকেন।

তিনি আরও জানান, বাড়ি ফিরতে যে টাকা প্রয়োজন তা নেই তার কাছে। এত বড় ত্রাণের ব্যাগ নিয়ে ভিক্ষা করার শক্তিও নেই তার। পরে এ প্রতিবেদক ওই বৃদ্ধাকে গাড়ি ভাড়া করে দিলে বাড়ি ফিরেন তিনি।

এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের ওসি হারুন অর রশিদ জানান, টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের সৌজন্যে ৫০ জনকে চাল, ডাল, বুট, খেজুর, তৈল ও লবণ দিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে ওই বৃদ্ধ মাকে থানা থেকে এ সহয়তা করা হয়েছে।

ব.ম শামীম/এমএএস