মীম আক্তার

বাবা-মা ও দুই বোনকে হারিয়ে কাঁদছে মীম আক্তার (৯)। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই। বাবা-মা ও দুই বোনের লাশ নিয়ে বাড়ি যেতে হবে তাকে। অথচ কথা ছিল দাদির লাশ দাফন করে মা-বাবার সঙ্গে বাসায় ফিরবে। কিন্তু তা আর হলো না। চিরতরে একা হয়ে গেল মীম।

মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় স্পিডবোট ও বালুবোঝাই বাল্কহেডের সংঘর্ষের ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় মীম। এ ঘটনায় তার বাবা-মা ও দুই বোন নিহত হয়েছে। তারা হলেন মীমের বাবা মনির হোসেন (৩৮), মা হেনা বেগম (৩২), বোন সুমি আক্তার (৬) ও রুমি আক্তার (৪)। ​ঢাকার মগবাজারে থাকত মীম ও তার পরিবার। তার দাদার বাড়ি খুলনায়।

রোববার (০২ মে) রাতে মীমের দাদি মারা যান। লাশ দাফন করতে বাবা-মা ও দুই বোনের সঙ্গে খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারখালি গ্রামে যাচ্ছিল মীম। পথিমধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এখন দাদির সঙ্গে বাবা-মা ও দুই বোনের মরদেহ দাফন করতে হবে মীমকে। আপন বলতে কেউ রইল না তার।

একই দুর্ঘটনায় স্বামী আরজু মিয়া ও দেড় বছরের ছেলে ইয়ামিনকে হারিয়ে দিশেহারা আদুরি বেগম। আদুরির বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো গ্রামে। স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকার হাসনাবাদে থাকতেন। দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে আদুরির মা মনোয়ারা বেগম মারা যান। মায়ের লাশ দেখতে স্বামী-সন্তান নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন। সকাল ৬টার দিকে ৩২ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট শিমুলিয়া ঘাট থেকে শিবচরের বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করা বালুবোঝাই বাল্কহেডে ধাক্কা খায় স্পিডবোট। এতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ির ইয়াছিন মাদবরকান্দি গ্রামের দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখেন।

২৬ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ১২ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাদের লাশ স্বজনদের কাজে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

তারা হলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো এলাকার আরজু মিয়া (৪০) ও তার দেড় বছরের ছেলে ইয়ামিন, মাদারীপুরের রাজৈর শঙ্কারদি এলাকার তাহের মীর (৩০), কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মাইখারকান্দি এলাকার কাওসার হোসেন (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫), তিতাস উপজেলার ইসুবপুর এলাকার জিয়াউর রহমান (২৮), মুন্সিগঞ্জের সাতপাড় এলাকার সাগর শেখ (৩৭), পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পসারিয়াবুনিয়া এলাকার জনি অধিকারী (২৬), খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারখালি গ্রামের মনির হোসেন (৩৮), তার স্ত্রী হেনা বেগম (৩২), মেয়ে সুমি আক্তার (৬) ও রুমি আক্তার (৪)।

এদিকে ২৬ যাত্রী নিহতের ঘটনায় স্পিডবোটটির চালক শাহ আলমকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর শাহ আলমসহ পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এখন তাকে পুলিশের নজরদারিতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, স্পিডবোটের চালক শাহ আলমকে আটক করে পুলিশের নজরদারিতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১২ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শিবচর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ শ্যামল বিশ্বাস বলেন, শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি বাংলাবাজারের দিকে যাচ্ছিল। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের কাছে পৌঁছালে স্পিডবোটটি বালুবাহী বাল্কহেডের পেছনে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নাজমুল মোড়ল/এএম