কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই শুধুমাত্র ইউটিউব দেখে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলুদ তরমুজ চাষে প্রথমবারের মতো সফলতা পেয়েছেন এক কৃষক। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে কালো তরমুজ চাষ করার পর এ বছর হলুদ তরমুজে ভালো সাফল্য পেয়েছেন রহনপুর পৌরসভার বহিপাড়া এলাকার গোলাম মোস্তাফার ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম। ফলে আগামী বছর ব্যাপক পরিমাণে হলুদ তরমুজ চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও বাজারে মূল্য বেশি থাকায় খুশি চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম হলুদ তরমুজ চাষি শরিফুল ইসলাম।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পেশায় কৃষক শরিফুল ইসলামের হঠাৎ তরমুজ চাষ করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে ইউটিউব। গত বছর নিজের মুঠোফোনে ইউটিউব দেখতে দেখতে সামনে আসে কালো তরমুজ চাষের ভিডিও। সেই ভিডিও দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে খোঁজ শুরু করেন কালো তরমুজের বীজের। এরপর বীজ সংগ্রহ করে কালো তরমুজে ১৫ কাঠা জমিতে এক বছরে দুই বারে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শরিফুল ইসলামকে। গত বছর কালো তরমুজ চাষে সফলতা পেয়ে এ বছর চুড়াডাঙ্গা থেকে ৮ হাজার টাকা দরে ১০০ গ্রাম চায়না জাতের বীজ নিয়ে ১ বিঘা জমিতে শুরু করেন হলুদ তরমুজের চাষাবাদ। পাশাপাশি কালো তরমুজ রয়েছে আরও ৫ বিঘা জমিতে। প্রতি বছরে ৩ বিঘা জমি ১২ হাজার টাকা ও বাকি ৩ বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকা হিসেবে ইজারা নিয়ে তিনি তরমুজ চাষ করেন। 

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও বাজারে উচ্চ মূল্য থাকায় ভালো দাম পেয়ে খুশি তরমুজ চাষি শরিফুল ইসলাম। ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন তরমুজ বাজারজাতকরণের কাজ। প্রথমবার ফলন তুলে প্রায় এক লাখ টাকা বিক্রিও করেছেন। লকডাউনের কারণে জেলার বাইরে থেকে ব্যাপারীরা আসতে না পারলেও জেলার পাইকারী ব্যবসায়ীরাই শরিফুলের জমি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন হলুদ তরমুজ। তাই সব মিলিয়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই কৃষক।

জেলার প্রথম হলুদ তরমুজ চাষি শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুড়াডাঙ্গা থেকে ১০০ গ্রাম বীজ ৮ হাজার টাকায় এনে ৭০ গ্রাম বীজ ১ বিঘা জমিতে বপন করেছি। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করলেও আমি মনে করি সফল হয়েছি। কারণ আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে ফলন কম হলেও দাম ভালো পেয়েছি।  ভালো চাহিদাও রয়েছে। এমনকি প্রথম বছরেই হলুদ তরমুজ চাষ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা ও অভিজ্ঞতা পেয়েছি। এক বিঘা জমিতে হলুদ তরমুজ চাষে মাত্র ৬০ দিনেই ফল পেয়েছি। এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা যাবে। অন্যদিকে কালো তরমুজ পেতে সময় লাগে ৭০ দিন। লাভও তুলনামূলক কম। 

তিনি আরও বলেন, তরমুজ চাষ ঝুঁকিপূর্ণ। সন্তানের মতো যত্ন করে চাষ করে ফসল ফলাতে হয়। সময় মতো সার-বিষ ও পানি দিতে হয়। এছাড়াও চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। বাইরের ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি দিতে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। ধানচাষ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন তরমুজ চাষ করে অধিক পরিমাণে আয় করতে পারায় সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

শরিফুল ইসলাম জানান, কালো তরমুজ চাষে ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও হলুদ তরমুজ চাষে ৫০ হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়। তবে লাভের পরিমাণও বেশি। 

তরমুজ ক্ষেতে শরিফুল ইসলাম

আগামী বছরের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণ জমিতে হলুদ তরমুজ চাষ করার ইচ্ছে আছে। ৯০ শতাংশ জমিতেই হলুদ তরমুজ চাষ করবো। কারণ আগামী বছর রোজা আরও এগিয়ে আসবে। অন্যদিকে কালো তরমুজের তুলনায় হলুদ তরমুজ ১০ দিন আগে ফলন দেয়। তাই হলুদ তরমুজ চাষ করে আগামী রোজায় বাজার ধরতে চাই। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বিশ্বরোড মোড়ের ফল বিক্রেতা রুবেল আলী বলেন, হলুদ তরমুজ এই জেলায় প্রথম। তাই স্বাভাবিকভাবে এর চাহিদাও অনেক বেশি। অন্য তরমুজের তুলনায় অধিক দামে হলুদ তরমুজ নিতে আগ্রহী ক্রেতারা। আগে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এগুলো আমদানি করতাম। কিন্তু এ বছর প্রথমবারের মতো শরিফুল চাষ করেছেন, তাই সেখান থেকেই কিনে বিক্রি করছি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. বিমল কুমার প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক বছরে নায্যমূল্য না পেয়ে এই জেলার কৃষকরা তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। হাতেগোনা দু-একটি জায়গা ছাড়া চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে তরমুজ চাষের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। তবে গোমস্তাপুরের শরিফুল ইসলাম নামে এক চাষি জেলায় প্রথমবারের মতো চায়না জাতের হলুদ তরমুজ চাষে ভালো সফলতা পেয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, যেহেতু হলুদ জাতের তরমুজ বছরে ৩ বার চাষাবাদ করা যায়, এর আকার ছোট ও দেখতে খুবই আকর্ষণীয়, তাই বাজারে এর চাহিদাও অনেক। কৃষি বিভাগ এসব উচ্চ দামের ফল চাষে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে ক্ষেতে গিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আগামী বছর শরিফুল ইসলামকে দেখে এই হলুদ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হবেন জেলার কৃষকরা।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর