চাচার পাশে মীম

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে স্পিডবোটের সঙ্গে বালুভর্তি বাল্কহেডের সংঘর্ষে বেঁচে ফেরা মীম তার বাবা, মা ও দুই বোনের লাশ নিয়ে খুলনার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। সোমবার (৩ মে) রাত ৭টার দিকে তেরখাদা উপজেলা সদরের পারোখালী গ্রামে এসে পৌছায় তারা। তাদের দেখতে ছুটে এসেছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন।

বাড়িসহ পুরো এলাকায় এখন চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার (৪ মে) সকালে মীমের বাবা-মা ও দুই বোনকে দাফন করা হবে।

তেরখাদা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এফএম অহিদুজ্জামান বলেন, মাদারীপুরের শিবচরের ঘটনাস্থল থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মরদেহগুলো তেরখাদায় আনা হয়েছে। এক শোক কাটিয়ে উঠতেই আরেক শোকে পড়লাম সবাই। পারোখালী গ্রামের বাসিন্দা মনির শিকদারসহ পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হওয়ায় অনেক আত্মীয়-স্বজন এখনো এসে পৌঁছাতে পারেননি, তাই মঙ্গলবার সকালে মরদেহ দাফন করা হবে।

মনির শিকদারের বেয়াই কিসমত হাওলাদার জানান, ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন মনির শিকদার। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাদের। এখন কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।

স্থানীয়রা জানায়, মনির শিকদারের বাবা আলম শিকদার মারা গেছেন অনেক আগে। রোববার রাত ৮টায় মা মারা যাওয়ার সংবাদ রাতেই মনিরকে জানানো হয়। সবার সিদ্ধান্ত ছিল সকালে মনির এসে পৌঁছালে মায়ের দাফন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সকাল থেকে মনিরের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তারা আর অপেক্ষা করেননি। সকাল ১০টায় মনির শিকদারের মা লাইলী বেগমের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। এর কিছু সময় পরই নৌ-দুর্ঘটনার খবর আসতে থাকে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শিবচরে ছুটে যান।

মনির শিকদারের ভাই কামরুজ্জামান জানান, রোববার রাতে মা লাইলী বেগম (৯০) বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ওয়াল্টনের শো-রুম বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি ফেরেন কামরুজ্জামান। রোববার রাতে সাহরি সেরে ঢাকা থেকে তেরখাদায় বাড়ির উদ্দেশে তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ফিরছিলেন মনির শিকদার। পদ্মা নদীর শিবচর এলাকায় পৌঁছে মনির শিকদারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার ভাতিজা মিরাজ শিকদারের। সেখানে শেষ কথা হয়েছিল তাদের। মিরাজ তার নানিকে নিয়ে আগের স্পিডবোটে পদ্মা পেরিয়ে তেরখাদায় এসেছিল। পরে জানা গেল-মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা নদীতে একটি বালুভর্তি বাল্কহেডের সঙ্গে যাত্রীবাহী স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন।

এ দুর্ঘটনায় স্ত্রী হেনা বেগম, কন্যা সুমি আক্তার (৭), রুমি আক্তার (৪) ও মনির শিকদার নিহত হন। প্রাণে বেঁচে আছে শুধু তাদের ৯ বছর বয়সী মেয়ে মীম আক্তার। বা-মা ও ছোট দুই বোন হারিয়ে বাকরুদ্ধ মীম; শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে।

কামরুজ্জামান বলেন, তাদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থান আমার মায়ের পাশে সারিবদ্ধ করে দাফন করব বলে কবর তৈরি করেছি। কথা শেষ না করেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন তিনি।

মোহাম্মদ মিলন/এএম/এমএইচএস