গাছে বাঁধা বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ডিসি
বৃদ্ধ জহুরুল ইসলাম
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা ৭২ বছরের বৃদ্ধ জহুরুল ইসলামকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ইউএনও। একেই সঙ্গে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর।
মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে উপজেলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিংঙ্গীমারী গ্রামের বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে ‘বৃদ্ধের পায়ে লোহার শিকল’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ দেখে বিষয়টি নজরে আসে। পরে তার বাড়িতে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। প্রয়োজন হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে জহরুল ইসলামের স্ত্রী শরীফা বেগমের একটি হাত ও পা বিকল হয়ে যায়। এতে একা হয়ে পড়েন জহরুল। এরপর ধীরে ধীরে জহরুল ইসলামের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে তিনি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এক সময়ে স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়েসহ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে জহুরুল ইসলামের সুখের সংসার ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে জহরুল ইসলামের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তাকে নানা স্থানে চিকিৎসা করিয়েও তেমন কোনো ফল মেলেনি। উপায় না পেয়ে ২০২০ সাল থেকে তাকে শিকলে বন্দি করে রাখে পরিবার।
বিজ্ঞাপন
দারিদ্র্যের কারণে স্বামীর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি প্যারালাইজড স্ত্রী শরীফা বেগম। পরের বাড়ি থেকে সাহায্য তুলে বর্তমানে অনেক কষ্টে স্বামীকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। ঘরে বন্দি থাকার পর অনেক সময় জহরুল ইসলাম শিকলসহ যখন বেরিয়ে আসেন, তখন স্থানীয়দের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়। তাকে নিয়ে কষ্টে আছে তার পরিবার। অথচ সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে যেতে পারেন জহুরুল। ফিরে আসতে পারেন স্বাভাবিক জীবনে।
বৃদ্ধ জহরুল ইসলামের স্ত্রী শরীফা বেগম বলেন, অর্থের অভাবে স্বামীর সঠিক চিকিৎসা করাতে পরিনি। আমি নিজেও প্যারালাইজড রোগী। দিনে দিনে আমার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের দুজনের চিকিৎসা না হলে হয়তো একদিন মরে যাব।
শরীফা বেগম বলেন, সংবাদকর্মীরা বিষয়টি দেখে খবর লিখেছেন। এরপর উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জহরুল ইসলামের ছোট ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, কাজের জন্য বাইরে যাই। ওই সময় বাবা পাগলের মতো মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ কারণে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছি।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ কমান্ডের হাতীবান্ধা উপজেলা শাখার আহবায়ক রোকনুজাজামান সোহেল, ইউএনও স্যার যে মানবিক কাজটি করেছেন; তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জহুরুল ইসলামের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। এছাড়া তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএম/এমএইচএস