বৃদ্ধের পায়ে লোহার শিকল

এক পায়ে পরানো হয়েছে লোহার শিকল। গাছের সঙ্গে বাঁধা সেই শিকল। দুই হাত খালি। রাতে ঘরের চৌকির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় তাকে। সারাদিন ছটফট করেন। কখনো দিন কাটে বাহিরে আবার কখনও অন্ধকার ঘরে। এভাবেই একটি বছর কেটে গেছে ৭২ বছরের বৃদ্ধ জহুরুল ইসলামের। তার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিংঙ্গীমারী গ্রামে।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে জহরুল ইসলামের স্ত্রী শরীফা বেগমের একটি হাত ও পা বিকল হয়ে যায়। এতে একা হয়ে পড়েন জহরুল। এরপর ধীরে ধীরে জহরুল ইসলামের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে তিনি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়েসহ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে জহুরুল ইসলামের সুখের সংসার ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে জহরুল ইসলামের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তাকে নানা স্থানে চিকিৎসা করিয়েও তেমন কোনো ফল মেলেনি। উপায় না পেয়ে ২০২০ সাল থেকে তাকে শিকলে বন্দি করে রেখেছে পরিবার।
দারিদ্র্যের কারণে স্বামীর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি প্যারালাইজড স্ত্রী শরীফা বেগম। পরের বাড়ি থেকে সাহায্য তুলে বর্তমানে অনেক কষ্টে স্বামীকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। ঘরে বন্দি থাকার পর অনেক সময় জহরুল ইসলাম শিকলসহ যখন বেরিয়ে আসেন, তখন স্থানীয়দের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়। তাকে নিয়ে কষ্টে আছে তার পরিবার। অথচ সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে যেতে পারেন জহুরুল। ফিরে আসতে পারেন স্বাভাবিক জীবনে।
বৃদ্ধ জহরুল ইসলামের স্ত্রী শরীফা বেগম বলেন, অর্থের অভাবে স্বামীর সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমি নিজেও প্যারালাইজড রোগী। দিনে দিনে আমার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের দুজনের চিকিৎসা না হলে হয়তো একদিন মরে যাব।
জহরুল ইসলামের ছোট ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালাই। তাই বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে পারি না। ঠিকভাবে খেতেও দিতে পারি না।
বাবাকে গাছে বেঁধে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, কাজের জন্য বাইরে যাই। ওই সময় বাবা পাগলের মতো মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ কারণে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছি।
প্রতিবেশী আবেদ আলী বলেন, জহরুল ইসলাম মানসিক রোগী। কোথাও গেলে আর বাড়ি ফিরতে পারেন না। তাই শিকল দিয়ে তাকে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিংঙ্গীমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, জহরুল ইসলামকে শিকলে বেঁধে রাখার বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সাহায্য করা হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে ওই পরিবারকে সাহায্য করা হবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরএআর