রংপুরে নেই পুরুষ উটপাখি, পড়ে আছে অফুটন্ত ৭ ডিম
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। হরেক রকম গাছগাছালির ছায়ায় ঘেরা চিড়িয়াখানা এখন দর্শনার্থী শূন্য। সুনসান নীরবতা আর স্নিগ্ধ পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন রূপ-বৈচিত্র্যের প্রাণীগুলো রয়েছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে। এই চিড়িয়াখানায় বন্দি বড় আকৃতির উটপাখি দিয়েছে সুখবর। লকডাউন পরিস্থিতিতে গেল দুই মাসে সাতটি ডিম দিয়েছে এই উটপাখি। তবে পুরুষ সঙ্গীর অভাবে এখনও ডিমগুলো ফোটানো সম্ভব হয়নি।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন, দুই বছর আগে ঢাকা থেকে উটপাখিটি দর্শনার্থীদের জন্য আনা হয়। কিন্তু একাকীত্ব ঘুচতে এখন প্রয়োজন পুরুষ উটপাখির। করোনাকালের স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে খাঁচার ভেতরে গত দুই মাসে সাতটি ডিম দিয়েছে উটপাখিটি। ডিমগুলো ফোটানোর জন্য দরকার পুরুষ পাখির। অন্যথায় ডিমগুলো স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষিত করা হবে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (০৫ মে) বিকেলে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মরুভূমির জাহাজখ্যাত উটপাখি দুটি খাঁচায় বন্দি থাকলেও থেমে নেই দৌঁড়া দৌঁড়ি। ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারা এই দ্রুতগামীর পাখি কখনো নেপিয়ার ঘাস খাচ্ছে। আবার কখনো বাঁধাকপি-ফুলকপি, লালশাক, পালংশাকও খাচ্ছে। মা পাখিটি ডিমগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে আর কী যেন ভাবছে। যেন পারলে নিজেই ডিম ভেঙে ছানা পাখিকে বের করে নিয়ে আসার কল্পনায় বিভোর। কিন্তু আক্ষেপ পাশে নেই পুরুষ সঙ্গী।
বিজ্ঞাপন
সেখানকার কেয়ারটেকার আনিস বলেন, এই মা উটপাখিটি বালু গোল করে ঘুরে তার ওপরে প্রায় দেড় কেজি ওজনের ডিম দিয়েছে। পুরুষ উটপাখির অভাবে দুই মাস ধরে ডিমগুলো অফুটন্ত রয়েছে। ডিম ফোটানো সম্ভব না হলে এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার জু অফিসার ডা. এইচ এম শাহাদাৎ শাহিন ঢাকা পোস্টকে জানান, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে তিন মাস বয়সী বাচ্চা উটপাখিটি আনা হয়েছে। দুই বছর পর গত মাস থেকে ডিম দেওয়া শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত মোট সাতটি ডিম দিয়েছে এই উটপাখিটি। যার একেকটি ডিমের ওজন প্রায় দেড় কেজি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরুভূমির জাহাজখ্যাত এই পাখির বংশবৃদ্ধি হতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এখানে পুরুষ উটপাখির অভাবে ডিম থেকে বংশ বৃদ্ধিতে আমরা নতুন কোনো সফলতা দেখতে পারছি না। যদি পুরুষ পাখির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এটা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। নয়তো ডিমগুলো স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা ছাড়া উপায় নেই।
এ বিষয়ে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার ঢাকা পোস্টকে জানান, গত মার্চ মাস থেকে মা উট পাখিটি ডিম দেওয়া শুরু করেছে। পুরুষ পাখি না থাকার কারণে ডিমগুলো ফার্টাইল (ফুটানো) হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ ঢাকা চিড়িয়াখানাতেও একটি পুরুষ পাখির জন্য আবেদন করেছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো পাঠানো সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, এই উটপাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম জুলিয়েট। আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় এই পাখিগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। একেকটা ১৫০ কেজি ওজনের পাখি ৩ মিটার উঁচুতে উড়তে অক্ষম। তবে এরা খুব দ্রুতগামী ও দৌঁড়ে পারদর্শী। ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে। এরাই একমাত্র প্রাণী যাদের পায়ে দুটি মাত্র আঙুল রয়েছে। এরা দলবদ্ধ জীব। ৫ থেকে ৫০ সদস্যের যাযাবর দলে এরা ঘুরে বেড়ায়।
আমবার আলী বলেন, চিড়িয়াখানায় উটপাখিকে দৈনিক এক থেকে দেড় কেজি পোস্ট্রি ফিড, কলা, শাক, পাউরুটি, গম ও ভিটামিন প্রিমিক্স খাওয়ানো হয়। অঞ্চল ভেদে এদের প্রজনন ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি পুরুষ উটপাখি তার নিজস্ব এলাকা দখল করে ফেলে এবং তার সাথে ২-৭টি স্ত্রী উটপাখি থাকে। স্ত্রী উট পাখি দেড় কেজি ওজনের ডিম দেয়। ৩৫-৪৫ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এরা ২-৪ বছর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। বেঁচে থাকে ৩৫-৪৫ বছর।
প্রসঙ্গত, দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রংপুর নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটিতে ৩৩ প্রজাতির ২৫১টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে সিংহ, বাঘ, জলহস্তী, হরিণ, অজগর সাপ, ইমু পাখি, উটপাখি, বানর, কেশওয়ারি, গাধা, ঘোড়া, ভাল্লুক উল্লেখযোগ্য।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর