রাজিয়া সুলতানা শ্রাবণী

একমাত্র সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন রাজিয়া সুলতানা শ্রাবণীর (২১) বাবা-মায়ের। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেয়ের লেখাপড়ার জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন মুন্সিগঞ্জ শহরে। শহরের স্বনামধন্য মুন্সিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি করেন মেয়েকে। শ্রাবণী ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে লেখাপড়া করা শ্রাবণীর ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ব্যাংকার হওয়ার। কিন্তু হঠাৎ ক্যান্সারে সে স্বপ্ন এখন ফিকে হতে বসেছে। চিকিৎসার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রাবণীর বাবা-মাকে।

জানা গেছে, শ্রাবণীর চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সর্বশান্ত বাবা-মা শহর থেকে আবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে মেয়েকে শিক্ষিত করার জন্য শহরে আসা সেই মেয়েই এখন জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে। তাছাড়া শহরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রতি মাসে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী শ্রাবণীর বাবার চোখে এখন শুধুই অন্ধকার।

শ্রাবণীর বাবা হানিফ মোল্লা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর গ্রামের ইউনুস আলি মোল্লার ছেলে। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন তিনি। মালয়েশিয়া থাকা অবস্থায় তার পরিবার গজারিয়া গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করতো। এসএসসি পাস করার পর শ্রাবণীর লেখাপড়ার কথা ভেবে চলে আসেন শহরে। শ্রাবণীর পরিবার এখন মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর এলাকার কালিপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

শ্রাবণী বর্তমানে ঢাকাস্থ ধানমন্ডির আহমেদ মেডিকেল সেন্টারের ডা. প্রফেসর জাফর মো. মাসুদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ডা. তাকে কেমো দিচ্ছেন। ৮টি কেমো দেওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হলে অস্ত্রোপচার করবেন বলে জানিয়েছেন। কেমো কেনার টাকা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রাবণীর পরিবারকে। তাই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চায় তার পরিবার।

শ্রাবণীর বাবা হানিফ মোল্লা বলেন, শ্রাবণী ছোট থেকে খুব সুস্থ একটা মেয়ে ছিল। ওর জীবনে বড় অসুখ বলতে একবার শুধু ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল। ওকে কখনো প্যারাসিটামল কিনে দিতে হয়নি আমার। কিন্তু গত অক্টোবর মাস থেকে শ্রাবণী খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা তিন মাস বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জানতে পারি, ওর টিউমার ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলছে, টিউমারটির জীবাণু সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। টিউমারের কারণে শরীরের হাড়গুলো শুকিয়ে গেছে।

শ্রাবণী বলেন, সমস্ত শরীরে খুব ব্যথা হয়। বুক ভার হয়ে থাকে। শোয়া থেকে একা উঠতে পারি না। বুকের মধ্যেও ব্যথা করে। কাশিও হচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই। দ্রুত সুস্থ হতে চাই।

শ্রাবণীর মা পারভীন বেগম বলেন, প্রাইভেটে চিকিৎসা করানোর মতো আমাদের এখন আর টাকা নেই। সরকারিভাবে আমি আমার মেয়ের চিকিৎসা করাতে চাই। কিন্তু কোথায় কিভাবে করাবো জানা নেই আমাদের। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। পূবালী ব্যাংকের গজারিয়া শাখার (পারভীন, অ্যাকাউন্ট নম্বর ১১১২১০১০৫৪৭৭১) নম্বরে সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র হীরা বলেন, রাজিয়া সুলতানা শ্রাবণী আমাদের কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অল্প বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়েটি। মেয়েটিকে সহযোগিতা করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ব.ম শামীম/এসপি