এখন আমি কী করমু! আমার পুত আর বৌরে খুনি রাসেল চাকু দিয়া খুন কইরা ফেলাইছে। আমার পুত আর বৌয়ের কপালে এ আছিল আগে জানতাম না গো..! এই দৈত্য দানব আমার নাতি-নাতনিদের এতিম কইরা দিছে। এখন আমার এতিম নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই ছোট ছোট বাচ্চাদের কি হবে? ও আল্লাহ তুমি হের বিচার কইরো।

এভাবেই বলছিলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন হওয়া আলমগীরের মা গুলেমান বিবি। গত রোববার (৯ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে চাচাতো ভাই রাসেলের ছুরিকাঘাতে খুন হন আলমগীর হোসেন (৩২) ও তার স্ত্রী  মোর্শেদা বেগম (২৮)। 

এ দম্পতির চার সন্তান। সবাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের বড় মেয়ে লিমা আক্তারের বয়স ১৩ বছর। দ্বিতীয় সন্তান নাঈম ইসলাম এ বছর ১০ বছরে পা রাখল। তৃতীয় সন্ধান আলিমার বয়স ৭ বছর। চতুর্থ সন্তান রাকিবুল হাসান পৃথিবীতে আসার পর মাত্র হাঁটা শিখেছে। 

সরজমিনে দেখা যায়, দরজার সামনে বসে আহাজারি করছেন নিহত আলমগীরের মা গুলেমান বিবি। তার সঙ্গে কাঁদছে নাতনি লিমা আক্তার। পাশে নির্বাক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে নাঈম। তার চোখেমুখেও আপনজন হারানোর কষ্ট ফুটে উঠেছে। খানিক দূরেই মাটিতে নীরবে বসে আছে শিশু অলিমা। পুরো বাড়িতেই যেন শোকার্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। ঘটনাস্থলে ভিড় করা মানুষের মনেও প্রশ্ন ছিল এখন কে দেখবে এতিম বাচ্চাদের।

শোকার্ত বাড়িটিতে গিয়ে অসংখ্য মানুষের ভিড়ে ৫ বছরের শিশু রাকিবুল হাসানের খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে কেউ একজন খুঁজে নিয়ে আসে তাকে। মা-বাবা হারানোর শোক স্পর্শ করতে পারেনি সদ্য এতিম এ শিশুটিকে। পরম মমতায় বেড়ে ওঠা শিশু রাকিব হয়তো ভাবছে তার মা-বাবা কোথাও বেড়াতে গেছেন। খেলার ছলে অন্য শিশুদের সঙ্গে দুষ্টুমিও করছিল সে। কিছুদিন পর যখন শিশু রাকিব মা-বাবার খোঁজ করবে তখন কে সান্ত্বনা দেবে তাকে।

মা-বাবার করুণ পরিণতি নিয়ে আরেক কন্যা অলিমাও অনেকটা অনেকটা স্বাভাবিক। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা তেমনভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তার ওপর। তবে মা-বাবাকে হারিয়ে অজোরে কাঁদছে বড় মেয়ে লিমা আক্তার ও আরেক শিশুপুত্র নাঈম ইসলাম। দুর্বৃত্ত রাসেলের অমানবিক কর্মকাণ্ডে এতিম হয়ে পড়া আলমগীর-মুর্শেদা দম্পতির এ শিশু সন্তানদের পাশে কে দাঁড়াবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সাইদুর রহমান আসাদ/এমএএস