বাংলাবাজার ঘাটে উভয়মুখী যাত্রীর চাপ
ঈদের তৃতীয় দিনেও বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘরমুখী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। একইসঙ্গে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়ও লক্ষ্য করার মতো। উভয়মুখী যাত্রীদের চাপে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় রয়েছে।
রোববার (১৬ মে) সকালে ঘাটে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে। যাত্রীদের চাপ নিয়ন্ত্রণে এ মুহূর্তে ১৬টি ফেরি সচল রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সজাগ অবস্থানে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, লকডাউন ও সরকারি বিধিনিষেধের কারণে দূরপাল্লার যানবাহন, যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ঈদের আগে বাড়ি ফেরা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে নানা ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১২ মে) ফেরিতে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে পাঁচ যাত্রীর মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না তোলা হয় সেদিকে ফেরি কর্তৃপক্ষের কড়া নজর রয়েছে। এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে ফেরির সংখ্যাও।
শনিবার (১৫ জুন) ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় তেমন দেখা যায়নি। কিন্তু রোববার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয়মুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। প্রত্যেকটি ফেরিতেই প্রচুর যাত্রী রয়েছে। একইসঙ্গে হালকা যানবাহনও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা থেকে ফিরে জয়নাল জানান, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করি। ঈদের আগে ঘাটে প্রচুর ভিড় ছিল। এ জন্য আর আসিনি। কিন্তু ঈদের দুই দিন পর এসেও একই রকম ভিড়। এ পর্যন্ত আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
ঢাকামুখী এক যাত্রী জানান, সরকার যদি লঞ্চ চালু রাখতো তাহলে খুব ভাল হতো। এত ঝামেলা থাকত না। আমরা খুব ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারতাম।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন হোসেন ব্যাপারী। তিনি আজিমপুরে একটি মেস বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে। তার বাড়িতে রয়েছে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান। ঈদে ছুটি পাননি হোসেন। তাই ঈদের দ্বিতীয় দিন ভিড় ঠেলে পরিবারের কাছে ছুটছেন হোসেন ব্যাপারী।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদের ছুটি দেন মালিক। কিন্তু এ বছর ছুটি দেননি। আমার মেয়েরা অনেক কান্নাকাটি করেছে বাড়ি যাব না বলে। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে একা একা ঢাকা ছিলাম। বাড়ি যাওয়ার জন্যই আমার মন ছুটে যাচ্ছে।
দিনাজপুর থেকে নিজ বাড়ি শরিয়তপুর ফিরছেন মিরাজ হোসেন। একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন দিনাজপুর। ঈদ উপলক্ষে কাপড়ের দোকানে ভিড় থাকে প্রচুর। তাই আর যাওয়া হয়নি। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে অনেক কষ্টে ফেরি পার হয়ে বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, আমার মা অনেক বার ফোন করেছে। বলেছে বাবা তুই বাড়ি আয়, চাকরি ঈদের পর করিছ।
টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন রোকসানা বেগম। তিনি বলেন, ঈদের আগে একা মানুষের ভিড়ের মধ্যে যেতে সাহস পাইনি। ভেবেছিলাম ঈদের পরে গেলে ভিড় কম থাকবে। ভাড়ার টাকাও কম লাগবে। কিন্তু এ পর্যন্ত আসতে আমার ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যাত্রীদের চাপ ঈদের আগে যেমন ছিল তেমনই আছে। অনেক কষ্ট করে এলাম। পাশাপাশি অনেক ভয়ে ছিলাম।
শাহ আলম নামে এক যাত্রী বলেন, আমি একা একা ঢাকাতে ঈদ পালন করেছি। কিন্ত ভেবেছিলাম ঈদের পর খুব সহজে বাড়ি যেতে পারব। কিন্ত এখনো প্রচুর ভিড়।
মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী অফিসার আলতাফ হোসেন বলেন, আমার এখানে সজাগ থেকে দায়িত্ব পালন করছি। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীদের চাপ রয়েছে প্রচুর। তবে বিরতিহীনভাবে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এখনো ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। তাই আমরা সকল ফেরি সচল রেখেছি।
নাজমুল মোড়ল/এসপি