আরও ৫ ফ্লাইওভার বানাবে রাসিক
রাজশাহী নগরীতে আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার বানাবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। তৈরি করবে আরও ১৯টি বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে এসব অবকাঠামো।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) এসব অবকাঠামো নির্মাণের নকশা ও বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়নে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। রাসিকের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার।
বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সার্ম অ্যাসোসিয়েটের পরিচালক (অপারেশন) শেখ মাসুম মো. সালাহউদ্দিন, ডিজাইন প্লানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট লিমিটেডের (ডিপিএম) পরিচালক লাইক মো. মুস্তাক, ভিস্তারা আর্কিটেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা খালিদ পলাশ।
দুপুরের দিকে নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতেও উন্নয়ন কাজ চলছে। রাজশাহীর উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি আগামীতে আরও ৩/৪ হাজার কোটি টাকার দুইটি প্রকল্প অনুমোদন পাব।
বিজ্ঞাপন
মেয়র আরও বলেন, রাজশাহীকে আরও উন্নত, আধুনিক ও বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই নগরীতে যারা বসবাস করবেন, তারা গর্ববোধ করবেন। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ ও চামড়া শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে পার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
রাসিক সূত্র জানিয়েছে, নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে নির্মাণ হবে ৪০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১২ মিটার প্রস্থ একটি ফ্লাইওভার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৫২১ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর রেলওয়ে ক্রসিংয়ে নির্মাণ হবে ৮৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের ফ্লাইওভার। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ভদ্রা রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৫২০ মিটার এবং প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ কাজের পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান সার্ম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং ডিপিএম ও জেম কনসালটেন্ট লিমিটেড (জেভি)।
অন্যদিকে, নগরীর বর্ণালী, বন্ধ গেট এবং নতুন বিলসিমলা রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এই ফ্লাইওভারটির সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৫৫ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ কাজের পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান ডিপিএম এবং সার্ম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড ও জেম কনসালটেন্ট লিমিটেড (জেভি)।
একই প্রকল্পের আওতায় ১৯টি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ২, ৬, ১০ ও ১৩ নং ওয়ার্ডে তিনতলা বিশিষ্ট ওয়ার্ড অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, দুইতলা বিশিষ্ট শেখ কামাল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, চার তলা বিশিষ্ট সাধারণ গ্রন্থাগার, পাঁচতলা বিশিষ্ট বোয়ালিয়া অফিসার্স ক্লাব নির্মাণ, চারতলা বিশিষ্ট ধর্মসভা মন্দির উন্নয়ন, একতলা বিশিষ্ট সিটি গ্যারেজের উন্নয়ন, দুইতলা বিশিষ্ট হড়গ্রাম কাঁচাবাজার, তিনতলা বিশিষ্ট ভদ্রা কাঁচা বাজার, তিনতলা বিশিষ্ট শালবাগান কাঁচাবাজার, তিনতলা বিশিষ্ট নওদাপাড়া কাঁচা বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, ১০টি ফুটওভার ব্রিজ, ৩০টি যাত্রী ছাউনি, ১৫টি গণ-শৌচাগার নির্মাণ করা হবে।
এ ছাড়া নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে তালাইমারী, সিটি বাইপাস রেল ক্রসিং থেকে কোর্ট স্টেশন, মোহনপুর ফ্লাইওভার থেকে চৌদ্দপায়া চারলেন রোড, টি-বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর হযরত শাহ মখদুম দরগা শরীফ এলাকা পর্যন্ত ল্যান্ড স্কেপিং। নতুন বিলসিমলা ও ভদ্রা ক্রসিংয়ে ল্যান্ড স্কেপিং নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ১৯টি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ কাজের পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান ভিস্তারা আর্কিটেক প্রাইভেট লিমিটেড ও জেপিজেড কনসালটিং (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- প্যানেল মেয়র-১ ও ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযিম, জেম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়াহিদ আজহার। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক নূর ইসলাম তুষার।
পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্ট্রেশন তুলে ধরেন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার, প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডভাইজার আশরাফুল হক, সচিব মশিউর রহমান প্রমুখ।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি