মায়ের সঙ্গে ইয়ামিন

দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে চার পারা কুরআন মুখস্ত করা ছেলে ইয়ামিনের। তাকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চান মা ফাতেমা বেগম। কিন্তু টাকার অভাবে সেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর সহায়তায় সপ্তাহে দুইদিন ইয়ামিনের ডায়ালাইসিস চললেও কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ বহন করতে পারছে না তার হতদরিদ্র পরিবার।

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের টিয়ারকুনা গ্রামের কৃষিশ্রমিক মো. সেলিম মিয়া ও ফাতেমা বেগম দম্পতির ছেলে মো. ইয়ামিন মিয়া (১৪)। স্থানীয় টিয়ারকুনা হাফেজি মাদরাসা থেকে চার পাড়া কুরআন মুখস্থ করার পরই থেমে গেছে তার লেখাপড়া। কারণ তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে একদিন জ্বর আসে ইয়ামিনের। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ইয়ামিনকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তাররা প্রাথমিকভাবে ধরতে পারেন যে ইয়ামিনের কিডনি দুটি নষ্ট হয়ে গেছে। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় তার কিডনি দুটি নষ্ট হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে ইয়ামিনের এমন অবস্থার খবরে যেন অন্ধকার নেমে আসে তার পরিবারে।

কারণ ইয়ামিনের বাবা সেলিম মিয়া একজন কৃষিশ্রমিক। মানুষের জমিতে কাজ করলে খাবার জোটে। কাজ না করতে পারলে খাবার জোটে না। ইয়ামিনই পরিবারের বড় ছেলে। তার ছোট দুই বোন রয়েছে। বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। কৃষিশ্রমিকের কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনো মতে খাবার জোটে। সেখানে চিকিৎসা করানো অসম্ভব।

তবে ইয়ামিনের এলাকাবাসী গত দুই বছর ধরে সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল সপ্তাহে দুদিন ডায়ালাইসিস চলছে ইয়ামিনের।

ইয়ামিনের মা ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকে কুরআনের হাফেজ বানাবো। এখন সেই ছেলে দুই বছর যাবৎ অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে।

তিনি জানান, ছেলে তাকে বার বার বলে- ‘মা আমাকে বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই।’ তাই প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করতে চান তিনি। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা তাদের কাছে নেই। এজন্য কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান ফাতেমা বেগম। 

পাশেই বসে থাকা ইয়ামিনও মায়ের কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। ইয়ামিন বলে, অনেক কষ্টের মধ্যে সংসার চলছে। স্বপ্ন ছিল নিজে সংসারের অভাব মোচন করব। কিন্তু আমিও আজ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। পাড়ার খেলার সাথী ও বন্ধু-বান্ধবরা সুন্দর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে। আমারও খুব ইচ্ছে করে আগের মতো সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে। আপনারা সহযোগিতা করলে আমি আবার সুস্থ হয়ে ওঠবো ইনশাআল্লাহ।

ইয়ামিনের মামা শহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর থেকে ২০১৯ সালে এককালীন ২০ হাজার টাকা সাহায্য পেয়েছিলাম। তা দিয়ে সপ্তাহে দুইদিন ডায়ালাইসিস খরচ চালিয়েছি কিছু দিন। এখন তার মা ছেলেকে কিডনি দিতে চায়। কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রায় সাত লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা যোগাড় করার সামর্থ্য আমাদের নেই। দেশ ও প্রবাসের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার ভাগনেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করতেন তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম।

আর দশজন মানুষের মতো সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায় চার পারা কুরআনের হাফেজ ইয়ামিন মিয়া। সবার সহমর্মিতা আর সহযোগিতাই পারে ইয়ামিনকে বাঁচিয়ে রাখতে। ইয়ামিনের চিকিৎসার জন্য সাহায্য পাঠানো যাবে এই নম্বরে ০১৯২৭১২৩৩১২ (বিকাশ ও নগদ)।

এসকে রাসেল/আরএআর