কুড়িগ্রামে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব
রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিত্র এটি
কুড়িগ্রাম পৌরশহরে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দেড় মাসের ব্যবধানে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আড়াই শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখনও অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি । এ জন্য পৌরসভার সরবরাহ করা দূষিত পানিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানির সংযোগ লাইনের সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় পয়োনিষ্কাশনের লাইন যুক্ত হয়ে গেছে। এতে ময়লাযুক্ত পানি পান করে টাইফয়েডে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, পানি সরবরাহের সংযোগ লাইনের কোথাও কোথাও পুরনো হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনার পাশাপাশি টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত এক থেকে দেড় মাসে বেড়েছে। ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া, আমাশয়, সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে প্রতিদিনই কমবেশি রোগী ভর্তি হন। এর বাইরে গত দেড় মাসে শুধুমাত্র টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আড়াই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। এসব রোগীর অধিকাংশই শিশু, যুবক ও নারী। একই বাড়িতে একজন, দুজন করে শুরু করে পরিবারের সব সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন টাইফয়েডে।
কলেজ রোড সংলগ্ন পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস পাড়ার সুজা উদ্দিন বলেন, আমার বাড়িতে প্রথমে আমার টাইফয়েড ধরা পড়ে। এরপর আমার ছেলে, তারপর মেয়ে ও শেষে আমার স্ত্রী টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। মূলত পৌরসভার সরবরাহ করা দূষিত পানির কারণেই আমাদের টাইফয়েড হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে আমাদের।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে ঘোষপাড়ার আব্দুল সালাম মিয়া বলেন, গত ১৫ দিন ধরে টাইফয়েডে আক্রান্ত আমার স্ত্রী ও ছেলে নিয়ে আমি চরম বিপাকে আছি।
জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুমী আক্তার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জ্বর ছিল। ১০৪-১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর ওঠে। কোনোভাবেই জ্বর নামছিল না। পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন টাইফয়েড।
এদিকে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বিনা মূল্যে দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও প্রায় শেষের দিকে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তবে বিশেষ কিছু এলাকা থেকে রোগী আসছে বেশি। যেহেতু এটি পানিবাহিত রোগ। তাই আমরা ধারণা করছি, দূষিত পানি পান করার কারণেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য অনুরোধ করেছি।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম জানান, দ্রুত এটি সংস্কার করতে জনস্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী বলেন, সিভিল সার্জন ও পৌরসভার মেয়র বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। ধারণা করছি, হোটেল অথবা রেস্তোরাঁয় দূষিত পানি পান করে অধিকাংশ মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে তা দ্রুতই সংস্কার করা হবে।
মো. জুয়েল রানা/এসকেডি