বিশ্বে মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ভুট্টা, গম আর চালের পরই আলুর অবস্থান। বিশ্বের অনেক দেশেই রুটি বা ভাতের বদলে আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। তবে আমাদের দেশে আলু এখনো পরিপূরক বা সহায়ক খাবার। তাছাড়া আলু ভাতের চেয়ে পুষ্টিকর। শর্করার যোগান দেওয়ার পাশাপাশি আলু নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটায়। ফলে দেশে দিন দিনই বাড়ছে আলুর উৎপাদন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ৮৯.৫ লাখ টন। সেটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯ লাখ টন। বর্তমানে দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে ৬০ লাখ টন।

চাহিদার থেকে উৎপাদন বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই আলু রফতানি করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন রাশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, হংকং, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, তুরস্ক, আজারবাইজান, ইথিওপিয়া ও নাইজেরিয়াতে আলু রফতানি করে থাকে বাংলাদেশ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১ লাখ টনের বেশি আলু বিদেশে রফতানি করে, যার মধ্যে সিংহভাগ আলু রফতানি হয় রাশিয়াতে। টন প্রতি ২৫০ ডলার করে দাম পাওয়ায় রফতানি আয় হয় ২১৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ প্রায় ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১ লাখ ৩ হাজার টন থেকে ৩২ হাজার টনে নেমে আসে। এ সময় আসে মাত্র ৬৭ কোটি টাকা।

এর মধ্যে রাশিয়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানি বন্ধ করে দেয়। এসবের কারণ মূলত আলুর Ralstonia solanacearum রোগ। এটি আলুতে বাদামি পচা রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগে আক্রান্ত ফসল কোন দেশ আমদানি করে না। এর ফলে একদিকে যেমন ফলন কমে যাচ্ছে অন্যদিকে বিদেশে রফতানিও ব্যাহত হচ্ছে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৬ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রশিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন কৃষিবিদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। ৩ বছরের এই গবেষণায় Ralstonia solanacearum রোগের সহজ প্রতিকার উদ্ভাবন করেছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

কৃষিবিদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, দেশের ১৩টি জেলায় জরিপ চালিয়েছেন তারা। মাটিসহ অন্যান্য উপাদান পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন সম্ভাব্য উপায় নিয়ে গবেষণা করা হয়। এক পর্যায়ে আসে সফলতা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রশিদুল ইসলাম বলেন, আমরা গবেষণায় দেখেছি আলুখেতে আলু চাষ করার আগে সরিষা ফসল লাগিয়ে কিছু দিন রেখে দিয়ে বায়োফিউমিগেশন, ট্রাইকোডার্মা ভিত্তিক বায়োডার্মা এবং কেঁচো সার দিয়ে মাটিশোধন করে এই জীবাণুর সুপ্ত সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। 

আমরা বেশ কয়েক বার দেশের বিভিন্ন এলাকায় উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে চাষ করে দেখেছি আলুর Ralstonia solanacearum রোগ হয়নি। তাই আমরা বলছি চাষিরা এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে রোগ থেকে মুক্তি পাবে। এর ফলে রফতানিযোগ্য কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব। যার দ্বারা আলু রফতানির নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। শিগগিরই এই পদ্ধতি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এ গবেষকরা।

এসপি