৪৫ দিন পর রমেকে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম শুরু
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগ
টানা ৪৫ দিন বন্ধ থাকার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শনিবার (২২ মে) যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারীর আর্থিক অনুদানে বিকল থাকা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পানি শোধনাগার) দুটি মেরামত করা হয়। এরপর থেকে সচল হয়ে উঠে হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিট।
রমেক হাসপাতালে গত ৮ এপ্রিল থেকে পানি শোধনাগার মেশিন নষ্ট হওয়ার কারণে কিডনি বিভাগে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এতে রংপুর বিভাগের আট জেলার কিডনি রোগে আক্রান্তরা নিয়মিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। দেড় মাস ধরে ডায়ালাইসিস করতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়েছে রোগীদের।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ডায়ালাইসিস ইউনিটে পানি শোধনাগার প্লান্ট ও কয়েকটি মেশিন নষ্ট হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। মাঝে মাঝেই দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল হয়ে থাকে। এ মেশিন দুটি মেরামত করতে ঢাকা থেকে প্রকৌশলীরা করোনা পরিস্থিতির কারণে আসতে পারেননি। এতে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়।
হাসপাতালের নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগের প্রধান মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ২৬টি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মধ্যে সার্বক্ষণিক ১২-১৪টি যন্ত্র চালু থাকে। তবে দুটি পানি শোধনাগার মেশিনের একটি দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট থাকে। অপরটিও গত দেড়মাস আগে পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়ে। ফলে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম বন্ধ হয়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। পরে আমেরিকাপ্রবাসী সৈয়দা আফরোজা বিউটি নামে এক নারীর আর্থিক অনুদানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটি মেরামত করা হয়।
কিডনি ওয়ার্ডের ইনচার্জ মোখলেসুর রহমান জানান, এই ওয়ার্ডে ডায়ালাইসিস মেশিন আগে ছিল ৩০টি, এখন ১৮টিতে দাঁড়িয়েছে। বাকিগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। এরপরও রোগীদের সেবা দেওয়া চলছিল। কিন্তু দুটি মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় টানা ৪৫ দিন ডায়ালাইসিস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ডায়ালাইসিস করাতে না পেরে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
নেফ্রোলজি বিভাগে প্রতি দিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগীর নিয়মিত ডায়ালাইসিস হয়ে আসছিল। প্রতিটি যন্ত্রে দুই থেকে তিনজন রোগীর ডায়ালাইসিস হয়ে থাকে। একজন রোগীর সপ্তাহে দুই দিন করে ডায়ালাইসিস হয়। প্রতি ডায়ালাইসিসে খরচ হয় ৪০০ টাকা। কিন্তু বাইরে ডায়ালাইসিস করাতে গেলে ৩ হাজার টাকার বেশি লাগছে।
প্রতি মাসে রমেক হাসপাতালের ডায়ালাইসিস বিভাগ ৪ লাখ টাকারও বেশি আয় করে থাকে। মাত্র ৭ লাখ টাকা খরচ করে নষ্ট মেশিন দুটি সচল করা সম্ভব ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ আর উদাসীনতার কারণে তা সচল করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
রমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম নুরুন্নবী লাইজু ঢাকা পোস্টকে জানান, ডায়ালাইসিস কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি জেনে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ডায়ালাইসিস ইউনিটের বিকল মেশিনগুলো মেরামতের জন্য আর্থিক অনুদান দেন ওই প্রবাসী। শনিবার মেশিন দুটির মেরামত কাজ শেষে সচল হলে আবারও ডায়ালাইসিস কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
ডায়ালাইসিসের অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে মেশিন মেরামত করতে না পারার পেছনে লকডাউনকে দুষছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, হাসপাতালের অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর