ফরিদ উদ্দিন

সরকারি তথ্যসেবা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন দিয়ে খাদ্য চেয়ে উল্টো ১০০ জনকে খাদ্য দিতে বাধ্য হওয়া সেই ফরিদ উদ্দিন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিনকে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

এই পুরো ঘটনার নেপথ্যে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। বুধবারের (২৬ মে) মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

তবে উপজেলা প্রশাসন ঠিক কোন খাত থেকে এই ক্ষতিপূরণ দিতে যাচ্ছে সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ হলেও ফরিদ উদ্দিনের পরিবার যে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা পূরণ কী করে হবে?

হটলাইন ৩৩৩-এ নম্বরে কল করে খাদ্যসহায়তা চাইলেও খাবার পাননি ফরিদ উদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) উল্টো সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে তাকে ১০০ জনকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করতে হয়েছে। কারণ, স্থানীয় ইউপি মেম্বার আইয়ুব আলীর দেওয়া তথ্যমতে কথিত ‘৪তলা বাড়ির মালিক ও সচ্ছল ব্যক্তি’ বনে যান ফরিদ উদ্দিন।

কিন্তু শনিবার ১০০ দরিদ্র ত্রাণ নিতে আসলে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উঠে আসে অসুস্থ ও নিম্নমধ্যবিত্ত ফরিদের প্রকৃত অবস্থা। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে শুরু হয় তোলপাড়।

জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যদিও পূর্বে তিনি তার আর্থিক অবস্থার সঠিক তথ্য দেননি, তারপরও তাদের যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তা দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা ইউএনওর তাই উনি কোনো না কোনো চ্যারিটেবল ফান্ড থেকে দিয়ে দেবে।

ইউএনও আরিফা জহুরা জানিয়েছেন, আসলে গণমাধ্যমকর্মীদের কারণেই ফরিদ উদ্দিনের প্রকৃত চিত্রটি যাচাই করতে পেরেছি। তিনি আসলেই প্রকৃতভাবে দরিদ্র। কিন্তু তিনি যদি সেদিন তার কথাগুলো বলতেন তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না। সোমবারের মধ্যে ফরিদ উদ্দিনকে তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হবে।

তবে কোন ফান্ড থেকে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও আরিফা জহুরা বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। উপজেলা প্রশাসনে বিভিন্ন চ্যারিটি ফান্ড রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় কোনো দানশীল ব্যক্তিও যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে সেভাবেও সহায়তা করা হবে।

এদিকে ফরিদ উদ্দিনের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে স্থানীয়ভাবে। পাশাপাশি দেশজুড়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে তোলপাড়। বিশেষ করে ফরিদ উদ্দিনের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে তাকে ৪তলা বাড়ির মালিক বানানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালনকারী সেই ইউপি মেম্বার আইয়ুব আলীর শাস্তির দাবি করছেন হাজারো মানুষ।

রাজু আহমেদ/এমএসআর