অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে ফসলের মাঠ

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলতি বছরের শুরু থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুকিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। নেই সেচ দেওয়ার পানি। পুকুরের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সোমবার (২৪ মে) সকালে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরে বৃষ্টিপাত শূন্যের কোটায় নেমে গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে; চার মাসে ৪৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও ২০২১ সালে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৭৯ মিলিমিটার। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়নি। গত বছর মে মাসে ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এ বছর ২৪ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২ মিলিমিটার।

বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, বায়ুমণ্ডলে প্রয়োজনীয় উপাদানের একটিতে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা দেবে। বৃষ্টিপাত বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে। কিন্তু বতর্মানে বৃষ্টিপাতের তারতম্য বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে মৌসুমি বায়ু বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। যখন আসে তখন শক্তি সঞ্চার করে বাতাসের আদ্রতা বৃদ্ধি পায়। তখনই বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এ বছর মৌসুমি বায়ু দেরি করে আসছে এবং পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প নিয়ে আসেনি; তাই বৃষ্টি হচ্ছে না। দ্বিতীয় কারণটি হলো, শুষ্ক মৌসুমে পানি না পাওয়ায় নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে; যা গত বছরের তুলনায় চার গুণ বেশি এবং পানির গতিবেগ ঠিক নেই। লবণাক্ততার কারণে পানি বাষ্পীভূতের হার কমে গেছে; তাই বৃষ্টি হচ্ছে না।

এদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিরূপ প্রভাব শুরু হয়েছে উপকূলে। ২৬ মে উপকূলে ‘ইয়াস’ নামে যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে; সেটি শক্তিশালী হওয়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের অনাবৃষ্টিকে দায়ী করেন গবেষক হাফিজ আশরাফুল হক।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সাগরে নিম্নচাপ দ্বিগুণ শক্তিশালী হচ্ছে। সাগরে সারা বছর নিম্নচাপ তৈরি হয়, বেশি হয় মার্চ-এপ্রিল ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় যখন নিম্নচাপ তৈরি হয়; তখন শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানে। ২০২০ সালে তিনটি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এ বছর কয়টা হয় বলা যায় না। ১৯৯১ সালে লঘুচাপের কারণে যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ২০২০ সালের আগে গত ৩০ বছরেও এমন ঘূর্ণিঝড় হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনই এজন্য দায়ী।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা রজনী বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃষ্টিপাতের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ও দূষণের ফলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবার মেঘে জলকণার সংযুক্তির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। এ কারণে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন, উৎপাদন, কৃষি ও আর্থসামাজিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম