নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চ ডুবে ৩৪ জন নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার ১৪ আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ঘটনায় আটক এসকেএল-৩ জাহাজটি ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বন্ডে মালিকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার ও রোববার পৃথক দুটি আদালতের আদেশে আসামিদের জামিন ও জাহাজের জিম্মা পায় মালিক। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না মামলার বাদী।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।  পিপি বলেন, বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন করা হয়। 

আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতে জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বাবদ ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ জনের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪ জনের পরিবারের লোকজন ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি হননি। তবে তাদের সকলেই আর কোনো দাবি-দাওয়া নেই বলে লিখিত দিয়েছেন। এই সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হলে বৃহস্পতিবার আদালত আসামিদের জামিন আদেশ দেন। 

এদিকে পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, রোববার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবিরের আদালত ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বন্ডে জাহাজটি মালিকের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন।

তবে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহত দুই বোন সাদিয়া ইভা (১১) ও লতার (১৯) বাবা দুখু মিয়া বলেন, একদিন এক আইনজীবী তাদের মোবাইলে কল করে মামলার বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ আসতে বলেন। পরে এক লাখ টাকা হাতে দিয়ে একটি কাগজে টিপসই নেন। তবে তাতে কি লেখা ছিল সে বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি। 

তাদের ওই টাকা নেওয়া ও কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার পর আসামিদের জামিন ও জাহাজ মালিকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর দুখু মিয়া বলেন, এমনটা হইব জানলে তো আমরা টাকা নিতাম না। আমরা এই ঘটনার সুবিচার চাই।’

গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জগামী এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় এসকেএল-৩ নামে কার্গো জাহাজ। জাহাজটি বাগেরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের মালিকানাধীন এসকে লজিস্টিকস নামক প্রতিষ্ঠানের। 

ওই লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে বিআইডবিব্লউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার পর ৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে ১৪ স্টাফসহ জাহাজটিকে আটক করে কোস্টগার্ড। পরে জাহাজটিকে জব্দ ও স্টাফদের গ্রেফতার দেখায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা পুলিশ। 

জাহাজটির বেপরোয়া গতি ও নৌ রুট সংকীর্ণ হওয়ার কারণে লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছিল বলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। এমনকি জাহাজটি চলাচলেরও অনুমোদন ছিল না।

জাহাজটি সোমবার সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সেন্ট্রাল খেয়াঘাট সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙর করা ছিল। স্থানীয়রা জানান, দুপুরের পর থেকে জাহাজটি আর তারা দেখছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল আলম বলেন, সকালে জাহাজটির মালিক পক্ষ আদালতের আদেশের কাগজ নিয়ে আসেন। ওই কাগজে জাহাজটি মালিক পক্ষের জিম্মায় দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে। পরে জাহাজটি তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়। তবে এতে তদন্তের কোনো সমস্যা হবে না।

তবে আসামিদের জামিন ও জাহাজ জিম্মায় দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন মামলার বাদী বিআইডবিব্লউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য। তিনি বলেন, জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। আদালতের মাধ্যমে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কত টাকা বন্ডে জাহাজের জিম্মা পেয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।

এসপি