নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ টানা পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে লাখো মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সোমবার (২৪ মে) রাতেও টানা পাঁচ ঘণ্টা পল্লী বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে ছিল রূপগঞ্জের অনেক এলাকা।

এ সময় বিদ্যুৎহীন ছিল রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়ন, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন, ভুলতা ইউনিয়ন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ও ভোলাব ইউনিয়ন।

তবে বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, রূপগঞ্জে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। অনেক সময় পোল মেরামতসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, আকাশে মেঘ দেখলে আথবা বৃষ্টি শুরু হলেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে এখানকার ছোট-বড় কলকারখানা ও নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে যেকোনো সময় ফুঁসে উঠতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার রাত (২৪ মে) সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর পৌনে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ এলেও দুই মিনিট থেকে পুনরায় আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। এরপর রাত পৌনে দুইটায় বিদ্যুৎ আসে।

উপজেলার তারাব পৌরসভা ছাড়া গোটা রূপগঞ্জ ছিল বিদ্যুৎহীন। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল কয়েক লাখ মানুষের। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কয়েক স্থানে গরু চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের রূপগঞ্জ জোনাল অফিসের আওতাধীন এলাকাগুলোয় অব্যাহত রয়েছে লোডশেডিং। আকাশে মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ বন্ধ করা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহে অনন্ত এক দিন ‘লাইন মেরামত’ করার অজুহাত দেখিয়ে সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে। অব্যাহত লোডশেডিং ও এক দিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার পরও গ্রাহককে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে প্রায় লাখো গ্রাহক।

বিদ্যুৎহীন থাকায় রূপগঞ্জের দাউদপুরের কয়েক স্থানে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ভোলাব, গোলাকান্দাইল, কায়েতপাড়া এলাকার কয়েক স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র ও দাউদপুর ইউনিয়নের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, তারা রূপগঞ্জ জোনাল বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন। এই জোনে অব্যাহত লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হয়। এ ছাড়া সপ্তাহে একবার ‘লাইন মেরামত’ করার অজুহাত দাঁড় করিয়ে সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। কোনো কোনো সময় ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত গড়ায়।

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকার গৃহবধূ রায়হানা সুলতানা কণা বলেন, সোমবার সকালে আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এরপর দুপুরের দিকে পৌনে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। আর রাতে ছিল না ৫ ঘণ্টা।

তালাশকুর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, কারেন্টের কতা কইয়া লাভ নাই। সারা দিনে চার-পাঁচবার কারেন্ট যায়। আর হপ্তায় (সপ্তাহ) এক দিন লাইন ঠিক করনের কতা কইয়া সকাল ৮টা থেইক্যা ৫টা পর্যন্ত কারেন্ট থাহে না। আবার বিলটা উডে বেশি।

বেলদি এলাকার জসিমউদ্দিন মিয়া বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই আমাদের এলাকার বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়।

রূপগঞ্জ জোনাল অফিসের পল্লী বিদ্যুতের উপ-জেনারেল ম্যানেজার লাবিবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার রাতে ভুলতার গ্রিডে সমস্যা থাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় পোল মেরামত করতে হয়। এ ছাড়া গাছপালা পরিষ্কার করতে গিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। মূলত রূপগঞ্জে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই।

নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রিডের সমস্যা থাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা হয়েছিল। যে কারণে রূপগঞ্জের বিশাল অংশ, আড়াইহাজার ও নরসিংদীর কিছু এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না।

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া/এনএ