পাবনায় যুবদল নেতা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী দম্পতি গ্রেফতার
পাবনা জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলীকে অপহরণ ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এক দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতাররা হলেন- শহরের শালগাড়িয়া শাপলা প্লাটিক এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তার স্ত্রী মোছা. যুথী আক্তার ওরফে আদুরী (২৮)। ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন উত্তর গাজীর চট এলাকা থেকে মঙ্গলবার ভোররাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ইব্রাহিম প্রামাণিক (৩০) নামে আরেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
বিজ্ঞাপন
পিবিআই জানায়, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে শালগাড়িয়া শাপলা প্লাটিক এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী (৪০) নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন গত ১ এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন।
এরপর ৫ এপ্রিল দুপুরে বস্তাবন্দি একটি মরদেহ আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মো. কাসেমের বাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন মরদেহটি শাহজাহানের বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় শাহজাহানের ভাই মো. আব্দুল গফুর বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত করে। কিন্তু তারা কোনো কূলকিনারা না পাওয়ায় হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পাবনা পিবিআইকে দেওয়া হয়। এসআই মো. সবুজ আলী মামলাটি তদন্ত করেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে পাবনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী জানান, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আসামি যুথী আক্তার আদুরী তার পরিবারসহ যে বাসায় ভাড়া থাকতেন তার মালিক চট্টগ্রামে বসবাস করেন। ওই বাসার ভাড়া ওঠানোর দায়িত্ব ছিল শাহাজাহানের ওপর। তাদের বাসাও ছিল পাশাপাশি স্থানে। শাহাজাহান ও যুথী মোবাইল ফোনে মাঝেমধ্যে কথা বলতেন। একপর্যায়ে তারা পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। শাহজাহান ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। তিনি যুথীকে স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে চাইতেন। যুথী একপর্যায়ে শাহাজাহানের প্রতি প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে সব ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলেন।
তখন যুথীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। যুথীর স্বামী শাহজাহানকে হত্যার জন্য ঘুমের ওষুধ কিনে দেন। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে যুথী গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহজাহানকে ডেকে নিয়ে সুকৌশলে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর গ্রামে তাদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান।
ওই বাড়িতে জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শাহজাহানকে খাওয়ান। ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত খাবার খেয়ে শাহজাহান ঘুমিয়ে পড়লে অচেতন অবস্থায় তাকে হাত-পা বেঁধে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মো. কাসেমের বাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেন আসামিরা। পরবর্তীতে যুথী ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর ঢাকায় পালিয়ে যান।
এদিকে গত ১৩ এপ্রিল আসামি মো. ইব্রাহীম প্রামানিককে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে তিনিও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
রাকিব হাসনাত/আরএআর