দুই বছর পর পাখির বাসার ভাড়া পেলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা এলাকার পাঁচ আমবাগান মালিক। মঙ্গলবার (২৫ মে) উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাগানমালিকদের হাতে বাসাভাড়া বাবদ মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের জন্য পাখির বাসার ভাড়া হিসেবে আমবাগান মালিক শফিকুল ইসলাম ৪০ হাজার টাকা, মঞ্জুর রহমান দুই লাখ টাকা, সাহাদত হোসেন ৯ হাজার টাকা, সানার উদ্দিন ৪০ হাজার টাকা ও শিরিন আখতার ২৪ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন।

বাগানমালিক শিরিন আখতারের হয়ে চেক নিয়েছেন তার ভাই ফারুক আনোয়ার। অন্য চার বাগানমালিক নিজ নিজ চেক বুঝে নেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদীজ্জামান, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, বাঘা উপজেলা বন কর্মকর্তা জহুরুল হক, চারঘাট ফরেস্ট রেঞ্জার এ বি এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন জানান, গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশে পাখির বাসার জন্য বাগান ভাড়া দেওয়ার একটা ব্যবস্থা হলো। এটি একটি বিরল ঘটনা। 

এদিকে ২০১৯ সালের পাখির বাসা ভাড়া পেলেও গত ২০২০ সালের ভাড়া এখনো পাননি বাগানমালিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন বলেন, প্রতিবছর জরিপ করে দেখা হবে বাগানের কার গাছে পাখি বাসা বাঁধছে। ২০২০ সালের জরিপ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এর ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হবে

জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষার শেষে শামুকখোল পাখিরা বাচ্চা ফোটানোর আগে খোর্দ্দ বাউসার এ আমবাগানে বাসা বেঁধে আসছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষে পাখিরা বাচ্চা ফোটায়। ওই সময় আমবাগান পরিচর্যায় গিয়ে পাখিদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন ইজারাদার। কিছু গাছের বাসা ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে বাধা দেন স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা। বাচ্চারা উড়তে না শেখা অব্দি বাসা না ভাঙার অনুরোধ জানান তারা। পাখিপ্রেমীদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ১৫ দিন সময় দেন ইজারাদার। 

এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে বিষয়টি আদালতের নজরে এনে নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। তাতে কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। 

এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগানমালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর জেলা প্রশাসনের গঠন করা কমিটি সরেজমিনে গিয়ে পাখির বাসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮টি আমগাছ চিহ্নিত করেন। ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে পরে প্রতিবেদন দেয় কমিটি। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর