ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনার কয়রা উপকূলে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। নদীতে উত্তাল ঢেউ সেইসঙ্গে চলছে রোদ বৃষ্টির খেলা। 

বুধবার (২৬ মে) ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া রয়েছে। সকাল ৮টার পর পর পূর্ব আকাশে সূর্যের দেখা মিললেও তার কিছুক্ষণ পর আবার মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। কখনো গুঁড়িগুঁড়ি আবার কখনো ঝোড়ো বৃষ্টি আবার রোদ। এভাবেই রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছে কয়রা উপজেলায়। 

এদিকে কয়রা হামকুড়ো এলাকায় জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে বলে মাইকিং করছেন সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা বলছেন, সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে বেড়িবাঁধ মেরামত করতে হবে।

খুলনার আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দুপুর নাগাদ উত্তর ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আর পূর্ণিমার প্রভাব থাকায় নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে তিন থেকে চার ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কয়রা মদিনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল থেকে বাতাস বইছে। নদীতে ঢেউ হচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি আর রোদ উঠছে।

কয়রা সদরের ১ নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা রুমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেড়িবাঁধের পাশেই বাড়ি। ঝড় আসলে ভয় লাগে। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এখানে থাকি। সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে রোদ উঠছে। নদীতে ঢেউ বইছে।

পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়রা উপজেলার ২৬টি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। মঙ্গলবার সকালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে যায়। জোয়ারের পানি এমন থাকলে খুব বেশি সমস্যা হবে না। তবে যদি পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং বাতাসের তীব্রতা বাড়ে তাহলে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়নি। তবে জোয়ারের পানিতে বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খুলনার কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, জোয়ারের পানি বেড়েছে। তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। আশা করছি হবেও না। তবে জোয়ারে পানি উপচে পড়তে পারে। উপজেলায় ১১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে একটি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দক্ষিণ বেদকাশির একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ জনের মতো মানুষ এসেছে। সাধারণত সংকেত ৯-১০ না হলে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চায় না। 

মোহাম্মদ মিলন/এসপি