বাজারে ফলের ছড়াছড়ি থাকলেও দামে নেই স্বস্তি

দুই সপ্তাহ আগেও তরমুজের দাম শুনে কপালে ভাঁজ পড়ত। কেজি দরে তরমুজ বেচাকেনা নিয়ে সারাদেশে হৈ-চৈও পড়েছিল। সেই তরমুজের বাজার এখন নরম। তবে ফলের বাজার এখন কিছুটা গরম। বাজারে এসেছে নতুন মৌসুমি ফল আম ও লিচু। আসতে শুরু করেছে জাম ও কাঁঠালও। সব ফলের দামই এখন চড়া। 

প্রতি বছরের মতো ফলের এ ভরা মৌসুমে এবারও রংপুরের হাটে-বাজারে রকমারি ফল আসতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে মৌসুমের ফলে সাজিয়েছে দোকান। বাজারে ফলের ছড়াছড়ি থাকলেও দামে নেই স্বস্তি। বছরের শুরুতে ফলের চড়া বাজারে ক্ষুব্ধ ক্রেতা সাধারণ। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরের তুলনায় এবার ফলের আমদানি কম হয়েছে। এ কারণে বেশি দামে কিনে ফল বিক্রি করছেন তারা।

শুক্রবার (২৮ মে) দুপুরে রংপুর সিটি বাজারসহ নগরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ের ফল দোকান ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী ও অস্থায়ী ফলের দোকান। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের এ সময়ে এসব দোকান ফলে ভরপুর। এখন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, কদবেল, লটকনসহ বিভিন্ন জাতের ফলের ছড়াছড়ি বাজারে। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হরেক রকম এসব ফলের দাম বেশ চড়া। তবে ফলের জাতভেদ, আকার আর চাহিদার ওপর চলছে বিকিকিনি। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

নগরীর সিটি বাজারের ফলের দোকানগুলোতে প্রতি কেজি ল্যাংড়া আম ৮০ টাকা, হিমসাগর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, খিশষ্যা ১০০ টাকা, গোপালভোগ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সাতক্ষীরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজারে যশোর ছাড়াও রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার আম রয়েছে। তবে রংপুর অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু হাড়িভাঙা আম এখনো বাজারে আসেনি। আগামী জুন মাসের ২০ তারিখের পর গাছ থেকে হাড়িভাঙা আম পাড়া শুরু হবে।  

রংপুর নগরে গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু। রংপুরের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি দিনাজপুর ও লালমনিরহাট জেলার লিচু পাওয়া যাচ্ছে হাট-বাজারে ও ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতাদের কাছে। তবে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা ও দাম সবচেয়ে বেশি।

বর্তমান বাজারে বদরগঞ্জের একশ পিচ লিচু ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, লালমনিরহাটের লিচু ২৫০-৩৫০ টাকা, দিনাজপুরের বেদেনা লিচু ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বোম্বে লিচু এখনো আসেনি। বাজারে জাম কেজিপ্রতি ২০০-২৪০ টাকা, যা রংপুর ও দিনাজপুর থেকে আনা হয়েছে।

জামরুল জাত ও আকার ভেদে প্রতি কেজি ৬০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁঠাল আকার ভেদে ৬০-৩২০ টাকা। তবে এখন তরমুজের চাহিদা কমে যাওয়ায়, নেই আগের মতো দরজ্বর। এখন তরমুজের কেজি ৩০-৪০ টাকা। আবার কোথাও কোথাও পিচ হিসেবেও তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বেল, বাঙ্গি, তরমুজ, পেঁপে ও পেয়ারাসহ আরও বিভিন্ন ফল দেখা গেছে ফল বাজারগুলোতে।

সিটি বাজারের ফলবিক্রেতা রাজু মিয়া বলেন, অভিযানের পর থেকে তরমুজের দাম কমে গেছে। এখন কেজিতে বিক্রি হলেও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। ৩০-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ২৫০-৪০০ কেজি পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি হয়। তবে গতবারের তুলনায় এবার তরমুজের বিক্রি অনেক কম।

তরমুজ কিনতে আসা চাকুরিজীবী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, নতুন অবস্থায় তরমুজ একটু বেশি দামে কিনেছিলাম। তখন রমজানে তরমুজের চাহিদা বেশি ছিল, দামও ছিল আকাশচুম্বী। এখন অনেক সস্তা মনে হচ্ছে। তবে আম, জাম, কাঁঠালসহ গ্রীষ্মকালীন ফলের দাম অনেক চড়া।

ফল বিক্রিতে ব্যস্ত দুলু মিয়া বলেন, প্রতিবছর নতুন ফল নামলে বাজারে উপচে পড়া ভিড় থাকত। কিন্তু করোনার কারণে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আগেরমতো বাজারে ক্রেতা নেই। আবার যারা আসছেন, তাদের অভিযোগের শেষ নেই। এ বছর আমদানি অনেক কম হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বেশি দামে ফল সরবরাহ করে একটু লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, নিরাপদ ফলের বাজার নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। রংপুর সিটি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ভাসমান ফল দোকানগুলোতে ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ ফল ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর