পরিবারের সঙ্গে দিনমজুর জাকির শেখ

‘আগে ভ্যান চালাইতাম, গাছ বাইয়া (গাছে উঠে নারিকেল, সুপারি পেড়ে ) সংসার চালাইতাম। এখন অসুখ হওয়ায় ভ্যানও চালাইতে পারি না। গাছও বাইতে পারি না। এর মধ্যে আবার করোনা। পরিবার নিয়ে কী খামু (খাবো)? কী করমু (করব)? কিছুই বুঝতেছি না।’ সস্প্রতি বিমর্ষ মুখে এভাবেই বলছিলেন দিনমজুর জাকির শেখ।

পেটে টিউমার হওয়ার কারণে ২ বছর ধরে কোনো কাজ-কর্ম করতে পারেন না বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ খানপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির শেখ। ফলে স্ত্রী, তিন ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

বছরখানেক আগে এলাকাবাসীর সাহয্যে ও নিজের জমানো শেষ সম্বল দিয়ে খুলনা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করিয়েছিলেন। কিন্তু টিউমার আবার বেড়ে যাওয়াতে দ্বিতীয়বার চিকিৎসা করানোর মতো কোনো আর্থিক সামর্থ্য নেই তার।

অর্থের অভাবে টিউমারের (লাল চিহ্নিত) চিকিৎসা করাতে পারছেন না জাকির শেখ

অসুস্থ জাকির শেখ বলেন, ‘তিনবেলা খাওন-ই জোটে না ঠিকমতো। ডাক্তার দেখাব কী করে? মানুষের ধারে হাত পাতি, যে টাকা পাই তাই দিয়ে চাইল (চাল) কিনে বাড়ি যাই। কিন্তু মাত্র দুই বছর আগেও আমি কাজ করতে পারতাম। সারাদিন ভ্যান চালাইতাম। সন্ধ্যায় বাজার সদাই নিয়ে বাড়ি ফিরতাম।’

‘গরিবের সংসারে অভাব তো একটু থাকেই। কিন্তু তখন বাচ্চাগুলার না খেয়ে থাকন লাগতো না। এখন তো প্রায় ওদের না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। ঈদেও ওদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। আমি আইজ এক ব্যর্থ বাবা হয়ে গেছি’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

জাকির শেখের বাবা আছর উদ্দীন শেখ বলেন, আমার ছেলে এখন কোনো কাজ করতে পারে না। খুব অসুস্থ। বয়সের জন্য আমিও কাজে যাইতে পারি না। আমার নাতিরা না খেয়ে থাকে। আপনারা আমাদের একটু সাহায্য করুন।

প্রতিবেশী জেসমিনা বেগম বলেন, জাকির ভাই কিছুদিন আগেও কাজ করতে পারতেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে এখন কিছু করতে পারেন না। অসহায়ভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কত লোক-ই তো সাহায্য-সহযোগিতা পায়, বিভিন্ন ভাতা পায়। কিন্তু ওরা হতদরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও না পায় কোনো সাহায্য, কোনো ভাতা।

স্থানীয় মো. আলিমুজ্জামান ও আবু তালেব বলেন, পেটের টিউমার দিন দিন বড় হচ্ছে, আর ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে জাকির ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও বন্ধ। কোনোরকম এলাকাবাসীর সহায়তায় চলছে জীবন। টিউমার অপারেশনের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। জাকিরকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানান তারা।

খানপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ইলিয়াস হোসেন বলেন, জাকির আমাদের এলাকার বাসিন্দা। তিনি আগে বিভিন্ন কাজ করতেন। কিন্তু পেটে টিউমার হওয়ার পরে আর কাজ করতে পারেন না। গত বছর করোনাকালীন সরকারি সাহায্যের ২৫০০ টাকা তাকে দিয়েছিলাম। এ বছর অনুদান আসলে তার নামে বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এমএসআর