হত্যার ১০ দিন পর অবশেষে বগুড়ার সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাজনীন আক্তারের (১৮) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুন) দিনভর তার স্বামী সাকিব হাওলাদারকে নিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের নিষ্ফল অভিযানের একদিন পর বুধবার (২ জুন) ধানক্ষেত থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। 

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো আফজাল হোসেন জানান, সকালে বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের এক কৃষক ট্রাক্টর দিয়ে ধানক্ষেত চাষ করতে গিয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় মরদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ধানক্ষেত থেকে দুপুরে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। 

তিনি আরও জানান, গতকাল বগুড়া সদর থানা পুলিশের অভিযানে মরদেহ উদ্ধার না হওয়ায় আসামিকে নিয়ে তারা বগুড়া ফিরে গেছেন। তবে মরদেহ ধানক্ষেতে কীভাবে এলো সেটি তদন্ত করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, নিহত কলেজছাত্রী নাজনীন আক্তার বগুড়া সদর থানার সাপগ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে ও স্থানীয় সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।  ফেসবুকের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের আব্দুল করিম হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন হাওলাদারের। সাকিব হোসেন বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসে ঝাড়ুদার হিসেবে কর্মরত। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজছাত্রী নাজনীনকে বিয়ে করেন। গত ২৪ মে সাকিব তার বাবা অসুস্থ বলে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালে যান। 

সাকিব বলেন, রাত ৯টার দিকে গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে বাবার ভাড়াটিয়া সালাউদ্দিনের বাড়িতে আমরা আসি। এ সময় আমার বাবা-মা কেউ বাসায় ছিলেন না। তার নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন।

আমার স্ত্রী নাজনীন আমাদের কাঁচাঘর ও টয়লেট দেখে আমার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে। আমাদের টয়লেটে টিনের বেড়া দেখে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাইরে থাকা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে তাকে গলায় ফাঁস ও বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করি। পরে পাশের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ গুম করি। আমার শ্বশুর আব্দুল লতিফ প্রমাণিক ২৬ মে আমার ইউনিটে ও থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউনিট ইনচার্জ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি খুন ও মরদেহ গুমের কথা স্বীকার করি।

এদিকে সাকিবের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে নিয়ে মঙ্গলবার (১ জুন) গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের সহায়তা বগুড়া সদর থানা পুলিশ তাদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে। ট্যাংকের মধ্যে মরদেহের বিভিন্ন অংশ, চামড়া, দুটি নখ এবং নাজনীনের পরিধেয় ওড়না পাওয়া যায়। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর