দেবরের সঙ্গে মিলে স্বামীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন মীম
গ্রেফতার সাব্বির ও মীম
পাবনার ঈশ্বরদীতে কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার মূলহোতা নিহত শাকিলের স্ত্রী মীম খাতুন (২০) ও ছোট ভাই সাব্বিরকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (২ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পরপরই মীম ও সাব্বিরকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে দেবর-ভাবি দুজনই বলেন, আমরা একে অপরকে চিনি না। মীম পুলিশকে জানান, ৫-৬ জন যুবক এসে তার হাত-পা বেঁধে তার স্বামীকে হত্যা করে ঘর তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। এই কথার কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। একটি মোবাইল সিমের মাধ্যমে ক্লু বের করে একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি তারা দুইজনই আলাদা আলাদা সিম ব্যবহার করে কথা বলতেন। বাসা বাড়িতে ওঠায় রাগে-ক্ষোভে দুইজন পরিকল্পনা করে তিনটি ঘুমের ওষুধ পানির মধ্যে মিশিয়ে খাইয়ে শাকিলকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলা ও পরকীয়ার কারণেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান আরও বলেন, শাকিলকে হত্যা করে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন মীম ও সাব্বির। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাব্বির ওড়না দিয়ে মীমের দুই পা, দুই হাত ও মুখ বেঁধে ঘরের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। এ সময় সাব্বির মীমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেওয়া মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যান। বাসা থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে মেইন গেট খুলে বের হয়ে যাওয়ার সময় চাবিটি একবাসা পরে প্রাচীরের দেওয়ালের ওপর রেখে দেন। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করল পুলিশ।
এর আগে গত শুক্রবার (২৮ মে) রাত ১২টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী শহরের সরকারি কলেজের সামনে রূপনগরের (মাহাতাব কলোনি) ভাড়া বাসায় শাকিলকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রোববার (৩০ মে) দুপুরে নিহতের মামা কোরবান আলী বাদী হয়ে মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
নিহত শাকিল উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুরের দুবলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে ও ঈশ্বরদী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাকিলের স্ত্রী মীম খাতুনের সঙ্গে ছোট ভাই সাব্বিরের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে শাকিল ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াবিবাদ লেগে থাকত। তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। বিষয়টি স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঘরোয়াভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে মীম বাবার বাড়িতে চলে যান। এরপর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের কলেজ রোডে রূপনগরের কলোনিপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন শাকিল। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ ঢাকা পোস্টকে জানান, এ ঘটনায় শাকিলের স্ত্রী মীম ও ছোট ভাই সাব্বিরের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। তারা উভয়ই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাকিব হাসনাত/আরএআর