আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পীর বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাত সোয়া ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোষের বাজার এলাকায় ভাস্কর্য শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের গ্রামের বাড়ির একটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে আগুনের বিষয়ে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে একটি ঘরের ভেতরে থাকা সব আসবাবপত্র, ভাস্কর্যসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

জানা গেছে, পয়লা বৈশাখে ঢাকায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি বানানোর কারণে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্রের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মানবেন্দ্র ঘোষের পরিবারের দাবি, মানবেন্দ্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি বানাননি, তিনি শুধু বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন। চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ি একই এলাকায়। এ জন্য শেখ হাসিনার মুখাকৃতি তৈরির ক্ষোভ থেকে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন এই ঘটনা ঘটতে পারে। আগুনে ঘরের ভেতরে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে যায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে মানবেন্দ্র বলেন, পহেলা বৈশাখে আমি শুধু বাঘের মোটিফটি তৈরি করেছি। আজকে দুর্বৃত্তরা আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এখন আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তায় ভুগছি। আগুনে একটি ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মুহূর্তে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মুখাকৃতি নির্মাণের বিষয়ে তাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর আমিসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য গতকাল মঙ্গলবার সদর থানার জিডি করেছি। এর পরই রাতে তার বাড়ির একটি ঘরে আগুন দেওয়া হয়।

তবে মামলার বিষয়ে জানতে মানবেন্দ্র ঘোষের মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে মামলার বিষয়ে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ঘটনা অনুসন্ধানে পুলিশ এবং সিআইডির চৌকস টিম কাজ করছে। আমরা আশাবাদী দ্রুত ঘটনা অনুসন্ধান করে অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ সম্পর্কে জানতে পারব। কারণ জানার পর আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাস্কর্য শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

এ ছাড়া তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নামপরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

সোহেল হোসেন/এএমকে