ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদে ভেঙে পড়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার তিনটি সেতু। উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের এ ঘটনায় দুর্ভোগে পড়েছে বোরাখালী, চরহাজীপুর, বগামারা, রিকশাখালী, চরঝিনারি, টেকিরচরসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অপরিকল্পিত খননের অভিযোগ এনে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করলেও তারা এর দায় নিচ্ছেন না। একে অপরকে দোষারোপ করা হচ্ছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চরআলগী ইউনিয়নের বোরাখালী গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখায় সাত বছর আগে ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি, দুই বছর আগে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি এবং পাঁচ বছর আগে ৬০ ফুট দৈর্ঘের আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই গ্রামের ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদে খনন কাজ শুরু করে। 

স্থানীয়রা জানান, সাত বছর আগে নির্মিত সেতুতে গেল ২৮ মে দুপুর থেকে ফাটল দেখা দেয়। ওইদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে সেতুটি। এর আগে ২৫ মে রাতে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ভেঙে পড়ে। এর একদিন পর পাঁচ বছর আগে নির্মিত সেতুটিও ভেঙে যায়। এতে গফরগাঁও ও হোসেনপুরের সঙ্গে অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। 

হাসনা হেনা নামে ওই গ্রামের এক গৃহবধূ বলেন, সেতু থাকার কারণে আমরা গফরগাঁও গিয়ে আমাদের বিভিন্ন কাজ সেরে আসতাম। এখন তো আমার মত এলাকার মানুষেরও ভোগান্তি বেড়ে গেল। দ্রুত এটি মেরামত করা দরকার।  

আফসানা শারমিন নামে আরেক নারী বলেন, খাল খননের পরই সেতুর নিচের মাটি সরে ভেঙে পড়েছে। খননটা পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে কিনা সেটি তদন্ত করা দরকার। 

চরহাজীপুর গ্রামের কৃষক হাসমত আলী বলেন, ‘এই সেতুগুলা আছে দেইখাই ত আমরা চরের কৃষকরা ধান, গম, পাট ও সবজিসহ কৃষিপণ্য অনায়াসেই গফরগাঁওসহ অন্যান্য বাজারে লইয়া যাইবার পারি। এতে কইরা আমরা দামও বেশি পাই। অহন ব্রিজ ভাইঙ্গা পড়ায় ত বিপদে পইড়া গেলাম গা।’ 

কৃষক হাসমত আলীর মত এমন অনেকেই বিপাকে পড়েছেন সেতু তিনটি ভেঙে পড়ায়। তাদের দাবি অবিলম্বে যেন সেতু মেরামত করা হয়।

সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়ে ঠিকাদার মাহমুদ হাসান সজিব বলেন, টেন্ডারে চাহিদা মোতাবেক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কেন সেতু ভেঙে পড়েছে সেটা তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে নদী খনন শুরু করে পাউবো। সেতু নির্মাণের আগে নদীটি ছিল সরু। দরপত্রের শিডিউল অনুযায়ী পাঁচ ফুট গভীরে বেসমেন্ট করে সেতু নির্মাণ করেন ঠিাকাদার। কিন্তু পাউবো কর্তৃক সেতুর কাছে ৮-১০ ফুট গভীর করে খনন করায় পানির চাপে মাটি সরে বেসমেন্টে ফাটল ধরে সেতু ভেঙে পড়ে। 

অন্যদিকে সঠিকভাবেই নদী খনন করা হয়েছে দাবি করে সেতু ভাঙার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছেন ময়মনসিংহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মুছা। 

তিনি বলেন, নদীতে সেতু করতে হলে পাউবোর অনুমতি লাগে। তারা অনুমতি না নিয়ে পাইলিং ছাড়াই সেতু তৈরি করেছে। পাইলিং না করে সেতু তৈরি করায় ভেঙে পড়েছে। এতে তো পাউবোর কিছু করার নেই। অপরিকল্পিত খনন নয়, অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণের কারণেই এগুলো ভেঙে গেছে। আমরা নিয়ম মেনে পরিকল্পনা মাফিক খনন করেছি। 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে শিগগিরই একটি টিম আসবে বলে জানতে পেরেছি। তদন্তের পর মূল বিষয়টি বুঝা যাবে। 

উবায়দুল হক/আরএআর